মিয়ানমার সেনার পক্ষে লড়তে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করার অভিযোগ
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এখন সেই সেনাবাহিনীর পক্ষেই লড়তে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বাস করা ছয় পরিবার এবং জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ মিয়ানমারে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে
লড়তে বাংলাদেশ থেকে কয়েকশ রোহিঙ্গা পুরুষ ও ছেলে নিয়োগ দিয়েছে।
জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার সংগঠনের এক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশ থেকে কয়েকশ রোহিঙ্গা নিয়োগ দিয়েছে।
বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’ আরএসও বলছে, তারা লড়ার জন্য শরণার্থীদের নিয়োগ করেছে।
আরএসওর রাজনৈতিক প্রধান কো কো লিন এএফপিকে বলেন, ‘আরাকান আর্মি আমাদের মানুষদের অত্যাচার ও খুন করেছে। তাদের একমাত্র নীতি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নির্মূল করা। তাই আমরা নিয়মিত রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দিয়ে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থু খা তিনটি সংগঠন—আরএসও, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরসা এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি বা এআরএর-বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, জান্তা বাহিনীর ‘পাশাপাশি লড়ার’ আগে নিয়োগপ্রাপ্তদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের থমাস কিয়ান এএফপিকে বলেন, ১৪ বছরের শিশুকেও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় যুদ্ধে গিয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। কারণ, জান্তা সরকার তাদের ‘বেতন এবং এমনকি নাগরিকত্ব’ দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছে।
আরাকান আর্মি কী?
২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। আরাকান আর্মি এর মধ্যে একটি। চলতি বছর আরাকান আর্মির কাছে অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
আরাকান আর্মি বলছে, তারা রাখাইন রাজ্যে রাখাইনদের আরও স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়ছে। বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা ঐ রাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন। এখনও ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা সেখানে বাস করেন।
চলতি মাসে আরাকান আর্মি রাখাইনের বুথিডং শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এলাকাটি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা রোহিঙ্গা।
বিদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গ্রুপ এক বিবৃতিতে বলেছে, আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের পালাতে বাধ্য করেছে। এরপর তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং লুটপাট চালিয়েছে। তবে আরাকান আর্মি এই অভিযোগকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারগুলো যা বলছে
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সফুরা বেগম এএফপিকে জানান, তার ১৫ বছরের ছেলে আব্দুলকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ঘর থেকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেছে। তারা আমাদের হুমকি দিয়েছে…. আমি চাইনি আমার ছেলে যুদ্ধে যাক। কিন্তু আমরা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ছিলাম।’
প্রতিশোধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে এএফপিকে জানিয়েছেন, আরসা তার ২০ বছরের ছেলেকে নিয়ে গেছে। তাকে সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ করতে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘শুনতে পেয়েছি যে, সে (ছেলে) যুদ্ধে আহত হয়েছে। এটা লজ্জাজনক যে আমার ছেলেকে জোর করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে…. প্রতিদিনই আমাদের মানুষদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
রাখাইন রাজ্যের বিশাল অংশজুড়ে মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন রোহিঙ্গা গ্রুপ ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা কেমন কাজ করছে তা জানা কঠিন।