বাবার মতোই কুপিয়ে হত্যা করা হলো ছেলেকে
ছয় বছর আগের কথা। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের গালিমপুর গ্রামে জহিরুল ইসলাম (৩২) তাঁর বাবা শামসুল মিয়ার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রথমে জহিরুলের সামনে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে একই কায়দায় জহিরুলকেও কোপানো হয়। দুর্বৃত্তরা তখন জহিরুলকে মৃত ভেবে একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে যায়। কিন্তু সেদিন ভাগ্যগুণে বেঁচে যান জহিরুল।
ছয় বছর পরের কথা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জহিরুল ইসলাম তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে বৈশাখী মেলা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পথে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা দুই ছেলের সামনেই জহিরুলকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে ফেলে যায়।
এ যেন ছয় বছর আগের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শামসুলকে যে কায়দায় তাঁর ছেলের সামনে হত্যা করা হয়, জহিরুলকেও ঠিক একই কায়দায় হত্যা করল দুর্বৃত্তরা। জহিরুল পেশায় দিনমজুর। তাঁর বাবা ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। তাঁদের সামান্য জমি রয়েছে। সেই জমি নিয়েই এলাকার প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে জহিরুলের বিরোধ।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, জমি-সংক্রান্ত শত্রুতার কারণে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছয় বছর আগে জহিরুলের বাবাকে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। তবে এ ঘটনায় খুনিদের চিহ্নিত করা গেছে। পুলিশ খুনিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।
পুলিশ আরো জানায়, বাড়ির পাশে ভিরিন্দা গ্রামের বৈশাখী মেলা দেখে দুই ছেলেশিশুকে নিয়ে রিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন জহিরুল। বাড়ি কাছাকাছি আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা রিকশার গতিরোধ করে। পরে জহিরুলকে প্রথমে কুপিয়ে ও পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
চিৎকার করলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ সহায়তা করতে এগিয়ে আসেনি। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
নিহতের স্বজনরা জানায়, জহিরুলের বাবাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন জহিরুলের অবস্থা ছিল গুরুতর। অর্ধমৃত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৫ দিন পর তাঁর জ্ঞান ফেরে।
হাসপাতালে থেকেই জহিরুল বাদী হয়ে বাবার হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেন। এরপর সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর আরো ক্ষেপে যায়। তিনি ছয় মাস চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। কিন্তু প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হত্যার হুমকির মুখে বাড়ি ফিরতে পারেননি।
প্রায় চার বছর বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে ছিলেন জহিরুল। কিছুদিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যনের মধ্যস্থতায় বাড়ি ফিরে আসেন তিনি।