মানুষ সত্যি অন্যের অনুভূতি উপলব্ধি করে
অন্যের ব্যথা, কষ্ট ও অনুভূতি আমরা ঠিক কতটা টের পাই, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা স্পষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা এবার মস্তিষ্কে সহানুভূতির নানা দিক শনাক্ত করে সেই ক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করছেন।
আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে অন্যদের অনুভূতি গ্রহণ করে, ক্রিস্টিয়ান কাইসার্স তা জানার চেষ্টা করছেন। তাঁর মতে, ‘গবেষণার মাধ্যমে আমি সত্যি টের পেলাম, যে মানুষ হিসেবে আমরা মৌলিকভাবে সহানুভূতিশীল। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা অন্য মানুষদের অনুভূতি স্পষ্ট টের পাই। আমাদের পশ্চিমা জগতে আমরা প্রায়ই ব্যক্তি সত্তাকে জোরালোভাবে জাহির করি। আমার গবেষণা যা সত্যি দেখিয়ে দিয়েছে সেটা হলো, আমাদের উপর আশেপাশের মানুষের গভীর প্রভাব কাজ করে। সেই মাত্রা এতটাই তীব্র, যে আমি নিজেকে আর বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে বিবেচনা করছি না। বরং এই পরিবেশ, আশেপাশের মানুষের অংশ হিসেবে নিজেকে দেখছি।’
গবেষণার শুরুতে বেশ বিরক্তিকর এক এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে ক্রিস্টিয়ান ও তাঁর টিম স্বেচ্ছাসেবীদের এক এমআরটি পরীক্ষা করেছিলেন। সেই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে কাইসার্স বলেন, ‘মস্তিষ্ক আমাদের কীভাবে আসলে অন্য মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে, তা বুঝতে স্ক্যানারে আবেগ ফুটিয়ে তোলা আমাদের কাছে অত্যন্ত জরুরি ছিল। অবশ্যই কাউকে স্ক্যানারে ঢুকিয়ে দশ সেকেন্ডের জন্য খুশি থাকার অনুরোধ করা যায় বটে, কিন্তু সেই প্রচেষ্টা খুব ভালো কাজ করবে না। এর অর্থ, আমাদের এমন এক উদ্দীপকের সন্ধান করতে হয়েছিল, যা গভীর আবেগ জাগিয়ে তোলে। আমরা একটি উপায় পেয়েছিলাম। স্ক্যানারে স্বেচ্ছাসেবীদের এমন এক অ্যানেস্থেশিয়া মাস্ক পরানো হয়েছিল, যার মধ্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের গন্ধ ঢোকাতে পারি।’
গন্ধ শুঁকলে আমাদের মস্তিষ্কে অনেক কিছু ঘটে। তার মধ্যে বেশিরভাগ অবচেতনে ঘটে। কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই আমরা টের পাই, সেই গন্ধ ভালো না খারাপ। সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যেও তার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দুর্গন্ধ পেলে আমরা নাক সিঁটকে সেখান থেকে চলে যেতে চাই। আমাদের পেটে তখন টান ধরে। খুব খারাপ লাগলে এমনকি বমিও হতে পারে।
ক্রিস্টিয়ান কাইসার্স সে যাত্রায় ঠিক এমন দুর্গন্ধ নিয়েই পরীক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘যে গন্ধ খুব ভালো কাজ করে, সেটা হলো বুট্রিক অ্যাসিড। মনে হয় যেন পচে যাওয়া মাখনের গন্ধ পাচ্ছি। অন্যটির গন্ধ পচা ডিমের মতো।’
এর পরের ধাপে স্বেচ্ছাসেবীরা শুধু এমন মানুষের ভিডিও দেখেন, যারা কোনো কারণে বিরক্তিকর অভিব্যক্তি দেখাচ্ছেন। সে সময় স্বেচ্ছাসেবীদের কিন্তু কোনো গন্ধ শুঁকতে হয় নি। মস্তিষ্কের মধ্যে তথাকথিত ইনসুলা সক্রিয়। সেটির অন্যতম কাজ গন্ধবিচার। ক্রিস্টিয়ান কাইসার্স বলেন, ‘‘অন্য কোনো মানুষ এমন গন্ধ পাচ্ছেন, শুধু সেটা দেখেই কী ঘটে, সেই অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করা বেশ ইন্টারেস্টিং।’
তারপর দুটি এক্সপেরিমেন্টের এমআরটি রিপোর্ট একটি অপরটির উপর বসালে সাদা রঙের মাধ্যমে মিলগুলো চোখে পড়ে। কাইসার্স বলেন, ‘নিজের ঘৃণা বা বিরক্তির অনুভূতির একটা অংশ কীভাবে জেগে ওঠে, তখন সেটা স্পষ্ট দেখা যায়। তখন মানুষ নিজের পেটে টান, এমনকি খারাপ স্বাদ বা দুর্গন্ধও অনুভব করে।’
ব্যথার তীব্র অনুভূতি কী, তা আমরা জানি বলে আমাদের মনে অন্যদের সাহায্য করার প্রবণতা জেগে ওঠে। আমাদের মস্তিষ্ক সেই অনুভূতিকে পুরষ্কৃত করে। ভালো কোনো কাজ করলে সুখের হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। আমাদের স্ট্রেসের মাত্রাও কমে যায় এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।