রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্দি বিনিময়
মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাশিয়া ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ইভান গার্সকোভিচ ও সাবেক মার্কিন নৌসেনা পল হোয়েলানকে মুক্তি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর আলজাজিরার।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘অন্যায়ভাবে রাশিয়ার কারাগারে বন্দি থাকা তিনজন মার্কিন নাগরিক এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী ব্যক্তি আজ তাদের বাড়ি ফিরে এসেছেন। এরা হলেন–পল হোয়েলান, ইভান গার্সকোভিচ, আলসু কুর্মাশেভা ও ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা।’
বাইডেন বলেন, ‘যে চুক্তির আলোকে তারা মুক্তি পেয়েছে তা কূটনীতিরই অবদান।’
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিবৃতি অনুসারে ১৬ ব্যক্তিকে রাশিয়া থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে পাঁচজন জার্মান নাগরিক ও সাতজন রুশ রাজনৈতিক বন্দি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিশ্চিত করেন যে, মুক্তি পাওয়া বন্দিরা রাশিয়া থেকে তুরস্কে পৌঁছেছেন এবং খুব শিগগিরই তারা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসবেন। তিনি বলেন, ‘আমি এবং মুক্ত বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে ওভাল অফিস থেকে কথা বলেছি।’
সাংবাদিক গার্সকোভিচকে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় মার্কিন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে দেওয়ার পর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। জার্নালের প্রকাশক আলমার লাটোয়ার ও প্রধান সম্পাদক এমা টাকার এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইভান ও তার পরিবারের জন্য স্বস্তি বোধ করছি, আমরা এ ঘটনায় অভিভূত ও আনন্দিত।’ তারা আরও বলেন, ‘তবে দুঃখের বিষয় হলো আরও অনেক সাংবাদিক রাশিয়া ও বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে অন্যায়ভাবে বন্দি রয়েছে।’
২০২৩ সালে ইভান গার্সকোভিচকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি হোয়েলানের বিরুদ্ধেও ২০২০ সালে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলে আসছে যে তাদের অন্যায়ভাবে বন্দি রাখা হয়েছিল।
এই বন্দি বিনিময় চুক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে তুরস্ক। তুরস্কের জাতীয় গোয়েন্দ সংস্থা (এমআইটি) এর আগে এক বিবৃতিতে বলেছিল, সংস্থাটি বন্দি বিনিময় কার্যক্রমে একটি বড় ধরনের মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়েছে, যা এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই চুক্তির আওতায় রয়েছে ২৬ জন বন্দি।
আরও যাদের মুক্তি দেওয়া হলো
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে রয়েছে রুশ ভিন্নমতাবলম্বী কারা-মুর্জা, আন্দ্রেই পিভোভারভ, লিলিয়া চানিশেভা, ওলেগ অরলভ, ইলিয়া ইয়াসিন, কেভিন লিক এবং কেসেনিয়া ফাদেইয়াভা।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ করার জন্য সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত রুশ চিত্রশিল্পী আলেক্সান্দ্রা স্কোচিলেঙ্কোকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জার্মান-রাশিয়ান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিয়েটার ভরোনিন মুক্ত হয়েছেন এবং মাদক মামলায় গ্রেপ্তার আরেকজন জার্মান নাগরিক প্যাট্রিক শোবেলকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বন্দি মুক্তির এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ বেলারুশ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসী তৎপরতায় অভিযুক্ত জার্মান নাগরিক রিকো ক্রেইগারকে।
অন্যদিকে, রাশিয়া ফেরত পেয়েছে ২০১৯ সালে একজন সাবেক চেচেন বিদ্রোহী কমান্ডারকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ভাদিম ক্রাসিকভকে। তিনি জার্মানিতে বন্দি ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটি যেসব ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে জালিয়াতির অভিযোগে বন্দি থাকা রুশ ব্যবসায়ী ভ্লাদিশ্লাভ ক্লুসিন, সাইবার হামলার দায়ে অভিযুক্ত এক রুশ আইনপ্রণেতার ছেলে রোমান সেলেজনেভ এবং এস্তানিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পন করা একজন রুশ নিরাপত্তা কর্মী ভাদিম কোনশচেনক।
এ ছাড়া শ্লোভেনিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কারাবন্দি রুশ দম্পতি আরতেম দুলসেভ ও আনা দুলতসেভাকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পোল্যান্ড থেকে মুক্তি দেওয়া হয় রাশিয়ান-স্প্যানিশ সাংবাদিক পাবলো গনজালেজকে। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের তথ্যানুসারে, গনজালেজের প্রকৃত নাম পাভেল রুবতসভ এবং সে একজন রুশ গুপ্তচর। এ ছাড়াও নরওয়ে থেকে মুক্তি দেওয়া হয় মিখাইল ভেলিরিভিচ মিকুশিনকে, যার বিরুদ্ধেও ছিল গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ।