রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ি মেয়র-কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির চিঠি মন্ত্রণালয়ে
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ।
আজ রোববার (১৮ আগস্ট) রাঙামাটি জেলা প্রশাসন রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরা অফিস করছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এই চিঠির কারণে প্রশাসক নিয়োগ হলে জনপ্রতিনিধি শূন্য হয়ে যাবে প্রতিষ্ঠান দুটি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা পৌরসভায়/কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় সব ধরনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বার্থে সূত্রস্থ পত্রের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ির মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির চিঠি পাঠিয়েছি। এর সঙ্গে মেয়রের পদত্যাগ করা, না করা বা আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ পদত্যাগও করেনি। এটা আমাদের একটি রুটিন কাজ। সারা দেশ থেকেই তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমরাও সেই হিসেবে তথ্য দিয়েছি। এর আলোকে পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়। আর মেয়র, কাউন্সিলদের অনুপস্থিতিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পৌরসভার রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে নেবেন।’
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে অফিসে না আসা আওয়ামী লীগের সিটিকরপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তালিকা জমা দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবারই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
পূর্ণাঙ্গ তথ্য হাতে পাওয়ার পর কার্যালয়ে ‘অনুপস্থিত’ জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি ‘সক্রিয় বিবেচনায়’ রয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা হাসান আরিফ সাংবাদিকদের আরও বলেন, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যেখানে জনপ্রতিনিধি উপস্থিত নেই সেখানে কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিকল্প দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; সিইওরা (প্রধান নির্বাহী) দায়িত্ব পালন করছেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘১২টি সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই, তাদের তালিকা চেয়ে চিঠি গেছে। কোথায় কোথায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অফিস করছেন, কোথায় করছেন না; সেটা দু-একদিনের মধ্যেই পেয়ে যাব। তথ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারব। তখন চিন্তা করব যে, সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে কি হবে না। এটা সক্রিয় বিবেচনায় আছে। তবে প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া আছে।’
উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই সারা দেশ থেকে তালিকা পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও ইউএনওরা। যাতে ছিল পার্বত্য জেলা রাঙামাটিও।
ফলে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ও বাঘাইছড়ি পৌরসভার মেয়র জমির হোসেনের নেতৃত্বাধীন পৌরসভা দুটি দৃশ্যত জনপ্রতিনিধি শূণ্য হবে।
তবে এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কাউন্সিলররা। রাঙামাটি পৌরসভার কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা বলেন, ‘আমি তো আজও অফিস করলাম। সকালে পৌরসভায় গিয়ে নিজের কাজ সেরে এলাম। কাউন্সিলররা তো ৯টা-৫টা অফিস করেন না। তাহলে অনুপস্থিত মানে কী! এটা তো চরম অন্যায় হয়েছে। অন্যদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার কেন আমরা হব? আমি তো কোনো দল করি না। আমার অপরাধ কী?’