শেকসপিয়র সম্পর্কে যেসব তথ্য অনেকের অজানা
ইংরেজি সাহিত্যের কিংবদন্তি উইলিয়াম শেকসপিয়র। আজ তাঁর ৪০০তম জন্মদিন। রয়্যাল শেকসপিয়র কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর গ্রেগরি ডোরান এই মহান সাহিত্যিক সম্পর্কে দিয়েছেন কিছু দারুণ তথ্য।
১. এক বিমান দুর্ঘটনার কারণ ছিলেন শেকসপিয়র! ১৯৬০ সালের ৪ অক্টোবর একটি লকগেড ইলেকট্রা অ্যারোপ্লেন বোস্টন এয়ারপোর্ট থেকে উড়াল দেয়। বিমানের রানওয়েতে ছিল প্রায় ১০ হাজার স্টার্লিং পাখির ঝাঁক। বিমানের সঙ্গে এগুলো উড়ে যায়। একসময় বিমানের ইঞ্জিনে দুর্ঘটনাক্রমে কিছু পাখি ঢুকে পড়ে এবং বিমানটি ভূপতিত হয়। মারা যান ৬২ জন যাত্রী। এই পাখিটির বাস উত্তর আমেরিকায়। নিউইয়র্কের এক শেকসপিয়রের পাগল ভক্ত ইউজিন শিফেলিন। তিনি এ পাখিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন ১৮৯০ সালে। শেকপিয়রের সাহিত্যে বর্ণিত এই গায়ক পাখির বাস যেন সেন্ট্রাল পার্কে হয়, তার ব্যবস্থা করেন ইউজিন।
বিংশ শতাব্দীতে স্টার্লিং পাখি মিসিসিপিতে পৌঁছে এবং আবারও ক্যালিফোর্নিয়ায় আসে। বর্তমানে তাদের আলাসকা ও ফ্লোরিডায় দেখা যায়। এরা এখন সংখ্যায় বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে। এরা কেবল ওই বিমান দুর্ঘটনার জন্যই দায়ী নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের কারণ হচ্ছে।
২. হিটলারের ১৯২৬ সালের স্কেচবুকে ‘জুলিয়াস সিজার’ মঞ্চস্থ করার একটি ডিজাইন আঁকানো ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের প্রতি দারুণ আকর্ষণ ছিল হিটলারের। কলোসিয়াম, প্যান্থিওন এবং কারাকালার বাথস ঘুরে আসার পর তাঁর মনে এমন কিছু থার্ড রাইখের জন্যে সৃষ্টির তৃষ্ণা ছিল। ১৯৩৭ সালে অরসন ওয়েলস তাঁর মারকারি থিয়েটার কোম্পানি চালু করেন নিউইয়র্কে। সেখানে ‘জুলিয়াস সিজার’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। ওই নাটকে নাৎসি জার্মানি ও ফ্যাসিস্ট ইতালিকে তুলে ধরা হয়।
৩. শেকসপিয়রের থিয়েটার ছিল তীব্র দুর্গন্ধময়। ১৫৯৯ সালে থমাস প্লেটার লন্ডনে নতুন প্রতিষ্ঠিত গ্লোব থিয়েটারে জুলিয়াস সিজার দেখতে গেলেন। কিন্তু সেখানে বাজে গন্ধ। পেছনে দেখলেন ১২০টি ইংলিশ মাস্টিফ জাতের কুকুর। কিছু দোকানে ছিল ভালুক ও ষাঁড়ের মাংস। অঞ্চলটি বাজে গন্ধে পূর্ণ। গ্লোব থিয়েটার আগুনে ধসে পড়ার দুই মাসের মধ্যেই কাছেই গড়ে ওঠে দ্য হোপ থিয়েটার। সেখানেও একই অবস্থা বিরাজ করত।
৪. বিখ্যাত অভিনেত্রী সারাহ বার্নহার্ডিট একবার লেডি ম্যাকবেথের মূর্তি তৈরির জন্য মডেল হয়েছিলেন। গোয়ার স্ট্যাচু অব শেকসপিয়র দাঁড়িয়ে আছে স্টার্টফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনের রয়াল শেকসপিয়র থিয়েটারের সামনে। এর স্তম্ভমূলে চারটি ছোট মূর্তি রয়েছে। এই চারটি ব্রোঞ্জ ফিগার শেকসপিয়রের সাহিত্যের ৪ উপাদান তুলে ধরেছে। প্যারিসে বুলেভার্দ মন্টপানাসের নিজ স্টুডিওতে এর ডিজাইন করেন ভাস্কর লর্ড রোনাল্ড গোয়ার। একদিন অভিনেত্রী সারাহ দেখা করতে গেলেন গোয়ারের সঙ্গে। সেখানে সারাহ লেডি ম্যাকবেথের বিষয়ে কথা বলেন। গোয়ারের স্ট্যাচু বসানো হয় ভবনের পাশে, সোয়ান থিয়েটারে পেছনে এবং চার্চের দিকে মুখ করে।
৫. মোজার্ট ‘টেম্পেস্ট’-র একটি অপেরা প্রায় লিখেই ফেলেছিলেন। সবাই জানেন যে, গিওসেপি ভার্ডি তাঁর জীবনের বহু সময় ব্যয় করেছেন কিং লিয়ারের ওপর একটি অপেরা লেখার কাজে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, মোজার্ট টেস্পেস্টের ওপর একটি অপেরা সংস্করণ করেছিলেন। এদিকে, ফ্রেডরিক ডিলিয়াস ‘অ্যাজ ইউ লাইক ইট’ নিয়েও অপেরা লিখতে চেয়েছিলেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি ঘটেছে মোজার্টের ক্ষেত্রে।
৬. ১৫৮৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে শেকপিয়রের যমজ সন্তানকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করা হয়। তাঁদের নাম ছিল হ্যামনেট ও জুডিথ। এ ঘটেছিল ক্যান্ডেলমাসের দিন। ওই দিন ঐতিহ্যগতভাবে ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা নামিয়ে ফেলা হয়। ১৫ বছর পর অর্থাৎ ১৬০০ সালের ক্যান্ডেলমাসের দিন মিডল টেম্পলে অনুষ্ঠিত হয় টুয়েলফথ নাইট। এই নাটকে অন্য দুটো যমজ বাচ্চাকে নেওয়া হয়। ওই নাটকে জাহাজডুবি হয় এবং বাচ্চারা ঢেউয়ের রাজ্যে হারিয়ে যায়। ১৫৯৬ সালের গ্রীষ্মের শেষ দিকে জুডিথের যমজ হ্যামনেট মারা যান। পরে অবশ্য ওই নাটকে দুই শিশুকে আবারও এক করেন নাটকীয় কায়দায়। বাস্তবে জুডিথ কোনোদিন তাঁর জন্মদিন পালন করেননি।
৭. ১৭৮৬ সালে রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট ‘দ্য মেরি ওয়াইভস অব উইন্ডসোর’ নামের শেকসপিয়রের একটি নাটক অনুবাদ করেন। তিনি নেভা নদীর পাশে হারমিটেজ থিয়েটার নির্মাণ করেন। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর অনুবাদকৃত নাটক। এটাই রাশিয়ার প্রথম নাটক যার অনুপ্রেরণায় ছিলেন শেকসপিয়র।
৮. শেকসপিয়রের নাটকের সবচেয়ে আনাড়ি মঞ্চায়ন ঘটে ১৬২৩ সালে। ওয়াশিংটনের ফোলজার লাইব্রেরিতে হাতে লেখা শেকসপিয়রের দুটো নাটকের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। কেন্টের প্লাকলেতে এটি মঞ্চায়ন করা হয় পারিবারিকভাবে। স্যার এডওয়ার্ড ডেরিং নাটকের দুটো পার্টকে নিজেই এক করে বাড়িতেই তা মঞ্চায়ন করেন।
৯. একটি বিশাল রেডউড গাছের গুঁড়ির ওপর মঞ্চায়ন হয় শেকসপিয়রের একটি নাটক। ১৮৪০-এর দশকে পশ্চিমে যখন স্বর্ণের খোঁজে খনিতে ব্যস্ত মানুষ, তখন গিরিখাতে শেকসপিয়রের নাটক মঞ্চস্থ হতো। সেখানে বিভিন্ন সেলুনে মঞ্চ তৈরি করা হতো। মাঠে ক্যানভাস এবং কাঠের কেবিন বানিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হতো।
১০. শেকসপিয়রকে ‘আমাদের কবিদের তারকা’ বলে ডাকতেন জনসন। শেকসপিয়রের চরিত্রের নামে বহু স্যাটেলাইটের নামকরণ হলেও শেকসপিয়রের নামে কোনো স্যাটেলাইট করা হয়নি। ১৮৫১ সালের দিকে উইলিয়াম লাসেল গ্রহের স্যাটেলাইটগুলো নামকরণ শেকসপিয়রের নাটকের চরিত্রের নামে করতে থাকেন। উপগ্রহ আছে যার নাম টাইটানিয়া, ওবেরন এবং পাক। এমনকি আছে প্রোসপেরো, এরিয়েল, ক্যালিবান এবং সাইকোরাক্স (ক্যালিবানের মা)। এ সবই শেকসপিয়রের চরিত্র। অথচ এদের কোনো কিছুর নাম শেকসপিয়রের নামে করা হয়নি।