জুলাই বিপ্লবে নিহত সুমির মরদেহ ৪ মাস পর উত্তোলন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সুমাইয়া আক্তার সুমির (১৯) মরদেহ আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য চার মাস পর কবর থেকে তোলা হয়েছে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাড়ির ৬তলার বারান্দায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী কবরস্থান থেকে মরদেহটি তোলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া আক্তার। পরে সুরতহাল শেষে মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পুনরায় একই কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট।
গত ২০ জুলাই বিকেলে বাড়ির ৬তলার বারান্দায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সুমাইয়া আক্তার সুমি। এ ঘটনায় তাঁর দুলাভাই মো. বিল্লাল বাদী হয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখ করে ২২ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও আনোয়ার ইসলাম। মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লায় তার ভাড়া বাসায় তার শ্যালিকা সুমাইয়া আক্তার সুমি (১৯) বেড়াতে আসেন। গত ২০ জুলাই বিকেলে তাঁর বাসা এবং আশপাশের বাড়ির উপর দিয়ে আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দেওয়ার সময় বাসার আনুমানিক ৩০০/৪০০ মিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০ তলা, মাদানীনগর এলাকার দিকে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ পান। হেলিকপ্টার উড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে এবং আশপাশের এলাকায় গোলাগুলির শব্দের কারণ দেখার জন্য সুমাইয়া আক্তার আসরের নামাজের পর পর বাসার ৬য় তলায় পশ্চিম-দক্ষিণমুখী বারান্দায় যাওয়া মাত্রই তাঁর মাথার বাম পাশ দিয়ে একটি গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পড়ে যান তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে সাইনবোর্ড এলাকায় প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ঘোষণা করেন। এরপর জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাইনাদী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।
মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তী সময়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন, শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে এ কে এম শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমান, মতিউর রহমান মতি ও আনোয়ার ইসলামসহ ২০০ থেকে ৩০০ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, রড, হকিস্টিকসহ নানা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মহাসড়কে শিমরাইল মোড় থেকে ১০ তলা, মাদানীনগর এলাকা পর্যন্ত এবং আশপাশে অবস্থান করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করেন। এ সময় মুহুর্মুহু গুলির ঘটনা ঘটে। ওই আসামীরা পরস্পরের যোগসাজসে সুমাইয়া আক্তারকে হত্যা করে।
মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে।