পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করায় মেয়েকে পুড়িয়ে মারলেন মা!
প্রেম করে বিয়ে করার ঘটনায় পাকিস্তানে এক কিশোরীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন তাঁর মা। গতকাল বুধবার দেশটির লাহোরে এ ঘটনা ঘটে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
পাকিস্তান কিংবা ভারতে কোনো ব্যক্তি পরিবার বা গোত্রের সম্মানহানি করছে বলে মনে হলে তাকে হত্যা করা হয়। এটাকে সম্মান রক্ষার্থে হত্যা (অনার কিলিং) বলা হয়। হত্যার সময় মনে করা হয়, এর মাধ্যমে সম্মানহানির যথাযথ প্রতিকার হয়েছে। প্রধানত নারীরাই এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের প্রধান শিকার হন।
পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, লাহোরের পারভীন রফিক নামের এক নারীর মেয়ে জিনাতের (১৭) সঙ্গে হাসান খান নামের এক ব্যক্তির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হাসানের সঙ্গে পালিয়ে বিয়েও করে জিনাত। এতে ক্ষিপ্ত হন তাঁর মা পারভীন।
মেয়ে জিনাত প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করে পরিবারের সম্মান নষ্ট করেছে বলে মনে করেন পারভীন। গতকাল জিনাতকে দড়ি দিয়ে বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জিনাতের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া এই হত্যায় সহায়তা করার অভিযোগে পারভীনের ছেলেকেও খুঁজছে পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকে সে পলাতক।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, নিজের মেয়েকে হত্যার বিষয়ে কোনো ধরনের অপরাধবোধে ভুগছেন না পারভীন। তিনি নিজেই পুলিশকে এ কথা বলেছেন।
জিনাতের স্বামী হাসান খান সাংবাদিকদের জানান, স্কুলে লেখাপড়া করার সময় থেকেই তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বারবারই বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিল জিনাতের পরিবার। একপর্যায়ে পালিয়ে বিয়ে করেন তাঁরা।
তিন দিন আগে জিনাতের মা ও এক চাচা তাঁদের বাড়িতে এসে জিনাতকে ফিরে যেতে চাপ দেন। হাসান ও জিনাতকে সামাজিকভাবে বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিনাতকে বাড়িতে নিয়ে যান পারভীন। কিন্তু যাওয়ার সময় বারবার জিনাত তার স্বামীকে বলতে থাকে, ‘আমাকে যেতে দিও না, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’
এখন নিজের ফোনে সংরক্ষণ করা স্ত্রীর ছবি দেখে সেই কথাগুলোই বারবার মনে করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই হাসানের।
পাকিস্তানে কিছুদিন আগেও প্রায় একইভাবে এক স্কুলশিক্ষিকাকে হত্যা করা হয়েছিল। ভয়ংকর এই ধরনের হত্যা পাকিস্তানে বেশ প্রচলিত। দেশটির একটি স্বাধীন কমিশনের হিসাব বলছে, ২০১৫ সালে পরিবারের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় অন্তত এক হাজার ১০০ নারী অনার কিলিংয়ের শিকার হয়েছে। এই সংখ্যা আগের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।