বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস
বয়সের সঙ্গে প্রাণ যোগ করুন
৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। এবার দিবসটির প্রতিবাদ্য ‘বয়সের সাথে প্রাণ যোগ করুন বা বয়সের সাথে সাথে কর্মক্ষম থাকুন’। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। এটি এখন ৭২ বছর বা তারও বেশি। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই এখন প্রবীণ ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে দুই বিলিয়ন মানুষ থাকবে ৬০ বছর বা তার অধিক বয়সের এবং ৪০০ মিলিয়ন মানুষ থাকবে, যাঁদের বয়স ৮০ বছর কিংবা তারও বেশি। আর এই অধিক সংখ্যক প্রবীণ ব্যক্তির বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে ডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বয়স বৃদ্ধিজনিত সমস্যা বেশি থাকবে, যেমন—হাড়ের ক্ষয়জনিত সারভাইক্যাল-স্পনডাইলোসিস, লাম্বার-স্পডাইলোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস বা শারীরিক অক্ষমতা, ডিমেনশিয়া, পারকিনসন ডিজিজ, অস্টিও-পোরোসিস ইত্যাদি।
সাধারণত ঘাড়ব্যথা, কোমরব্যথা, হাঁটুব্যথা, কাঁধেব্যথা ইত্যাদি সমস্যার কারণে প্রবীণ ব্যক্তিরা তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। অধিকাংশ প্রবীণ ব্যক্তি ডায়াবেটিস, হাই-পারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ ইত্যাদি অসুখে ভুগে থাকেন। এতে প্রবীণ ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক হাঁটা-চলা করতে না পারেন, তাঁর ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে না; অন্যদিকে দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বিকল করে দিতে পারে। তাই এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যথামুক্ত ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপযোগী রাখতে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে প্রতিবছর পাঁচ মিলিয়ন স্ট্রোকজনিত বিকলঙ্গতা, ১০ মিলিয়ন ডিমেনশিয়ার রোগী ও ৩২ ভাগ বয়স্ক মানুষের হাঁটা-চলার সময় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এসব সমস্যা সমাধানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এ কারণে এবার ফিজিওথেরাপি দিবসের স্লোগান ‘বয়সের সাথে প্রাণ যোগ করুন’। কারণ, অক্ষম হয়ে পড়ে থাকলে প্রবীণ ব্যক্তিরা পরিবার তথা সমাজের কাছে বোঝা হিসেবে পরিগণিত হবেন এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো সম্ভব হবে না।
তা ছাড়া ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন—অর্থোপেডিকস, নিউরোলজি, পেডিয়াট্রিকস, স্পোর্টস ইনজুরি ও রিহ্যাবিলিটেশন, কার্ডিওলজি, গাইনিকোলজি, সার্জারি ইত্যাদি। উপরোল্লিখিত বিভাগগুলোতে ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ পালন করে। ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে ওষুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রো-থেরাপিউটিক ইকুইপমেন্টস ও থেরাপিউটিক এক্সারসাইজের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের অধীনে বা পরামর্শ অনুযায়ী। নয়তো সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা না হলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে। তাই এই দিনে জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন। সঠিকভাবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন; ব্যথা ও শারীরিক অক্ষমতামুক্ত জীবনযাপন করুন।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।