দারফুরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে সুদান সরকার
সুদানের সংঘাতপীড়িত অঞ্চল দারফুরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির মতে, রাসায়নিক অস্ত্রে বহু শিশু নিহত হয়েছে।
অ্যামনেস্টির দাবি, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদানের দারফুর এলাকায় নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রের কারণে দুই শতাধিক শিশু নিহত হয়েছে। এদের সবার মৃত্যু হয় বিষাক্ত ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে রক্ত বমি, শ্বাসকষ্ট ও নানা চর্মরোগে।
গত ১৩ বছর ধরে দারফুরে সুদান সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। বহির্বিশ্বের চাপে ২০০৪ সাল থেকে সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার হার কিছুটা কমেছে। তবে অ্যামনেস্টি প্রকাশিত নতুন একটি প্রতিবেদন বলছে, পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি। নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর সুদার সরকারের আগ্রাসন অব্যাহত আছে।
দারফুরের প্রত্যন্ত এলাকা জেবেল মাররায় আট মাস ধরে তদন্ত ও গবেষণার পর মানবাধিকার সংস্থাটি ‘ঝলসিত পৃথিবী, গণধর্ষণ এবং বোমা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গবেষকরা ৫৬ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পান, যারা অন্তত ৩০টি ঘটনার বর্ণনা দেয়, যেখানে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে আব্দুল ওয়াহিদের নেতৃত্বাধীন সুদান লেবানিজ আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে সুদানের সরকারি বাহিনী।
গবেষকদের একজন হাসান বিবিসিকে বলেন, এসব হামলার বর্বরতা পরিমাপ করা অসম্ভব। গবেষণা চলাকালে যে সব ভিডিওচিত্র ও ছবি তাঁরা দেখেছেন, সেগুলো ছিল মারাত্মক। মৃত্যুর আগে ছোট্ট শিশুদের যন্ত্রণাকাতর চিৎকার শুনতে হয়েছে তাঁদের। কিছু কিছু বাচ্চা ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছিল না। রক্ত বমি করছিল।
ক্ষতিগ্রস্তরা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে জানিয়েছে, সরকারি বাহিনীর ফেলা বোমা থেকে অদ্ভুত ও অপরিচিত গন্ধের ধোঁয়া নির্গত হতো। এর কিছুক্ষণ পরই অনেকে বমি করতে শুরু করত। কখনো কখনো বমি ও পায়খানার সঙ্গে রক্তপাতও হতো। এমনকি ওই ধোঁয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের চোখ, চামড়া ও প্রস্রাবের রংও পাল্টে যেত।
রাসায়নিক বোমার কারণে বহু শিশু মারা গেলেও এখনো যারা বেঁচে আছে তাঁদের অনেকের অবস্থাই বেশি ভালো নয়।
দুজন রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, শিশুদের মৃত্যুর যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে রাসায়নিক অস্ত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মিল রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি সুদান সরকারকেও পাঠিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।