সাবেক ছিটের ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রার্থীদের
লালমনিরহাটের আসন্ন আটটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন সেখানকার প্রার্থীরা। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জেলার ছিটমহলগুলো এই আটটি ইউনিয়নের মধ্যেই পড়েছে। সাবেক ছিটমহলের এসব বাসিন্দা এবারই প্রথম ভোট দেবেন।
নির্বাচন উপলক্ষে আজ শনিবার পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জেলা প্রশাসন। এতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদপ্রার্থীরা অংশ নেন। এ সময় প্রচারণায় বাধা, মুঠোফোনে হত্যার হুমকি, ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ তুলে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীদের অনেকেই।
তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে মতবিনিময় সভা দুটিতে আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আগামী ৩১ অক্টোবর এ আটটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট, হাতীবান্ধার গোতামারী এবং পাটগ্রাম উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়ন, বুড়িমারী, শ্রীরামপুর, জগতবেড়, জোংড়া ও কুচলীবাড়ি ইউনিয়ন।
আজ বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত প্রার্থীদের মধ্যে গোতামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম প্রামাণিক এবং বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল জলিল নানা শঙ্কার কথা বলেন। এই দুই প্রার্থীই অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের প্রচারণায় বাধাসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
এর বাইরেও কোনো কোনো প্রার্থী ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন।
হাতীবান্ধার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা পাটগ্রামের ইউএনও নূর-কুতুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল হক প্রমুখ।
এর আগে দুপুরে পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনেও অনুষ্ঠিত হয় প্রশাসনের সঙ্গে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভা। সেই সভায় উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুল করিম অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। মোবাইল ফোনে একাধিকবার জীবননাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পদপ্রার্থী শামসুন্নাহার ও রশিদা বেগমও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেন মতবিনিময় সভায়।
জগতবেড় ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোখলেছুর রহমান তাঁর কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে বলে সভায় অভিযোগ করেন। এদিকে বুড়িমারী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু সাইদ নেওয়াজ নিশাত ভোটারদের সুষ্ঠুভাবে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকার দাবি করেন।
অপরদিকে সভায় জোংড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হুমায়ুন কবির অভিযোগ করেন, তাঁর কর্মীদেরকে অব্যাহতভাবে হুমকি ও সরাসরি ভয় দেখানো হচ্ছে নির্বাচন না করতে।
তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন জগতবেড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নবিবর রহমান। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত-শিবিরচক্র নানা ধরনের উসকানি ছড়াচ্ছে।
একই মত দেন উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেমও।
প্রার্থীদের বক্তব্যে এসব অভিযোগ উঠে আসার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন কোনো আপস করবে না। জনসাধারণের ভোটাধিকার অক্ষুণ্ণ রাখাসহ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানে সহায়তার অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও উপস্থিত প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক।
অপরদিকে পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক মতবিনিময় সভায় বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সর্বাত্মকভাবে মাঠে কাজ করবে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পাটগ্রাম উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) টি এম এ মমিন, হাতীবান্ধা উপজেলা সহকারী কমিশনার আজিজুর রহমান, পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকর কর, হাতীবান্ধা থানার ওসি রেজাউল করিম, পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান, হাতীবান্ধা উপজেলা নিবার্চন কর্মকর্তা মমিনুর আলম প্রমুখ।