ভারতে গিয়ে বাংলাদেশিরা রুপির বিড়ম্বনায়
ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট। আর এরপর থেকে বিপাকে পড়েছেন দেশটিতে বেড়াতে কিংবা চিকিৎসা বা ব্যবসার কাজে যাওয়া বাংলাদেশিরা। ফলে গত কয়েকদিনে ব্যাপক হারে কমেছে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা। সেই সঙ্গে নোট ভাঙাতে না পারায় প্রয়োজনীয় কাজ না শেষ করেও ফিরে আসতে হচ্ছে অনেককে।
দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাওয়া যাত্রী সংখ্যা কমে ঠেকেছে অর্ধেকেরও নিচে। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এই চেকপোস্ট দিয়ে রোগী, পর্যটক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা বেশি যাতায়াত করেন। এছাড়া বিদেশিরাও যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু ৯ নভেম্বরের পর থেকে ভারতে আসা-যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এখন শুধু ভারত থেকে বাংলাদেশে গড়ে ৪০-৫০ জন ভারতীয় যাত্রী আসেন।
তবে বাংলাদেশে আসা ভারতীয়রাও তাদের সঙ্গে আনা এসব রুপি নিয়েও পড়েছেন চরম বিপাকে। কোথাও ভাঙাতে পারছেন না এসব নোট। বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন অনেকে।
সম্প্রতি ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসা কয়েকজন যাত্রী জানান, ৯ নভেম্বরের আগেই ভারতে যান তাঁরা। ৫০০ ও ১০০০ রুপির পাশাপাশি তাদের কারো কারো পাসপোর্টে ডলারও এনডোর্স করা ছিল। হঠাৎ ৯ নভেম্বর সকালে তারা জানতে পারেন, ভারত সরকার সে দেশের ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করেছেন। এরপর থেকে তারা হোটেল-রেস্তোরাঁ, হাসপাতালে বিল পরিশোধসহ কেনাকাটা করতে গিয়ে এসব নোট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন।
গতকাল রোববার ভারত থেকে ফিরে আসা ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জের জিন্নাত আলী জানান, হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে তিনি ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। এ সময় ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী কিছু পরীক্ষার জন্য ওই হাসপাতালের কাউন্টারে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট মিলিয়ে ১৫ হাজার রুপি পরিশোধ করেন। কিন্তু কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এসব নোট নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরের দিন বিভিন্ন মাধ্যমে খুচরা রুপি সংগ্রহ করে আবারো হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করান তিনি।
হিলি বন্দর দিয়ে দেশে ফিরে আসা রংপুর শহরের বাসিন্দা রোখসানা খাতুন এবং বগুড়ার শেরপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী জানান, হাসপাতাল, ট্রেন, বাসে, হোটেলে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট দিয়ে সেবা নেওয়ার ঘোষণা ভারত সরকার দিলেও তা মানছেন না সেদেশের এসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে খুচরা নোটের অভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগি বাংলাদেশিদের। তাই প্রয়োজনীয় কাজ শেষ না করেই আগেভাগে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁদের।
শামিমা সুলতানা নামে এক নারী জানান, চেন্নাইয়ের একটি খাবার হোটেলে তাঁদের বিল আসে ৩০০ রুপি। তা পরিশোধের জন্য ৫০০ রুপির নোট দিলে হোটেলের ম্যানেজার তাঁদের জানান বাকি ২০০ রুপি তিনি দিতে পারব না। হয় এই ২০০ রুপি খেয়ে পরিশোধ করতে হবে, আর তা না হলে পরে এসে নিয়ে যেতে হবে। বাধ্য হয়ে ২০০ রুপি রেখেই ফিরে আসেন তাঁরা।
এদিকে গত ৭ নভেম্বর ভারতের বালুরঘাটের আখিরা গ্রামের গোপেন চন্দ্র শীল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যান বাংলাদেশের জয়পুরহাটের জামালগঞ্জের রুকন্দিপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তবে সেখানে গিয়ে রুপি ভাঙাতে না পেরে আত্মীয়ের কাছ থেকে বাংলাদেশি টাকা ধার নিয়ে বিভিন্নস্থানে ঘুরতে যান তাঁরা। গতকাল বিকেলে ভারতে ফিরে যান তিনি। জানান, সেখানে ফিলে আত্মীয়দের টাকা ফেরত পাঠাবেন।
হিলি চেকপোস্টের অভিবাসন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুজ্জামান জানান, গত ৯ নভেম্বরের আগেও প্রতিদিন হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি যাত্রী ভারতে যাওয়া-আসা করতেন। এরমধ্যে অধিকাংশই যাত্রী যেতেন চিকিৎসার জন্য। আর বাকী যাত্রীরা যেতেন ভ্রমন সহ ব্যবসা-বানিজ্য সংক্রান্ত কাজে। শুধুমাত্র ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতেন ৪০-৫০ জন ভারতীয় যাত্রী। কিন্তু গত ১০ নভেম্বরের পর থেকে এই চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী সংখ্যা ১০০-এর নীচে কমে এসেছে। ভারত সরকার ৫০০ ও ১০০০ রুপী নোটের লেনদেন নিষিদ্ধ করায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতে যাওয়া যাত্রীরা দেশে ফিরে আসতে শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।
ফিরে আসা কয়েকজন যাত্রীর বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যাত্রীরা বলছেন এবার ভারতে গিয়ে তাঁদের মনে হয়েছে তাঁরা শরণার্থীর মতো দিন কাটাচ্ছেন। পকেটে টাকা থাকার পরেও প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারছেন না। আরো বড় বিপদের মুখোমুখি হওয়ার আগেই জরুরি কাজ ফেলেও ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।