জার্মানি ছাড়তেই হচ্ছে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের পরিবারকে?
গতবছর জার্মানির একটি শরণার্থী শিবিরের হাসপাতালে ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম দিলেন এক সিরীয় নারী। জীবন বাঁচাতে স্বামীসহ নিজের দেশ ফেলে জার্মানিতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
জার্মানি আশ্রয় দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ ছিলেন এই আল হামজা দম্পতি। মেরকেলের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তাই সদ্যজাত কন্যার নাম রাখলেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। কারণ হিসেবে সেই সময় তাঁরা জানিয়েছিলেন, ওই মুহূর্তে জার্মানিকে তাঁদের কাছে মায়ের মতোই আপন মনে হচ্ছিল।
আর কিছুদিন বাদেই মেয়ের এক বছর বয়স হওয়ার কথা। নতুন দেশে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সবাই। জার্মানিতে প্রবেশ করা ১০ লাখ সিরীয় শরণার্থী মানুষের মতো হামজা পরিবারও গুছিয়ে নিচ্ছিলেন সবকিছু। এরই মধ্যে হঠাৎ জার্মানির ফেডারেল অফিস থেকে চিঠি এলো পরিবারটির নামে। আর সেখানে লেখা ছিল, শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে বসবাসের জন্য করা তাঁদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
ছোট্ট অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের বাবা মামুন আল হামজা বলেন, চিঠি পেয়ে রীতিমতো ভয় পেয়ে যান তাঁরা।
এনডিটিভি জানিয়েছে, এর পরিবর্তে, পরিবারটিতে ‘সম্পূরক সুরক্ষা’ পদ্ধতি নিতে বলা হয়। এটি একটি পৃথক আইনি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে অভিবাসীদের এক বছরের জন্য নির্বাসন দেওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। তবে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জার্মানিতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাঁরা যদি জার্মানিতে বাস করতে চান সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ জার্মান ভাষা শিখতে হবে এবং কাজ করতে হবে।
আল হামজা পরিবারের আবেদন খারিজ সম্পর্কে জার্মানির শরণার্থী বিষয়ক ফেডারেল অফিসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, যেহেতু পরিবারটি তৃতীয় একটি দেশের মধ্য দিয়ে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে প্রবেশ করেছেন সেহেতু তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কারণ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রথমে প্রবেশ করা নিরাপদ দেশেই আশ্রয় নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
এর আগে ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক কনভেনশনের অধীনে প্রায় সব সিরিয়ার নাগরিকদের অভিবাসীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে জার্মানির একটি আদালত তাঁর রায়ে বলেন, সিরিয়ার সব নাগরিককে শরণার্থী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। এর বদলে তাঁদের জন্য ‘সম্পূরক সুরক্ষা’ দেওয়া যেতে পারে। গত বুধবার ওই রায়ে আদালত আরো বলেন, সিরীয়দের জার্মানিতে থাকতে চেয়ে করা প্রতিটি আবেদনপত্র আলাদাভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে।
আর এই রায়ের ফলেই আবেদন খারিজের চিঠি পান ছোট্ট মেরকেলে বাবা-মা। সিরিয়া থেকে সরাসরি জার্মানিতে প্রবেশ না করাই এখন কাল হয়েছে তাঁদের জন্য। বলা হচ্ছে, উদ্বাস্তু হিসেবে প্রথম যে দেশটিতে তাঁরা প্রবেশ করেছিলেন সেখানেই থাকা উচিত ছিল তাঁদের। জার্মানিতে বসবাসের প্রায় এক বছর পর এই ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে শুধু হামজা পরিবারকেই নয় আরো অনেক পরিবারকেই এই সমস্যা মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।