ফিনদেশের দিনলিপি ৪
চিকেন উইথ ডার্ক রাইস
খাবারদাবারের জন্য পৃথিবীর অনেক দেশই বিখ্যাত। এর মধ্যে ওপরের দিকে থাকবে ইতালিয়ান, মেক্সিকান, চায়নিজ, ইন্ডিয়ান ফুড। এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এসব দেশের রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে না। এই তালিকায় সবার নিচের দিকে থাকবে কোন দেশ? আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি, ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য নর্ডিক দেশগুলো।
ফিনল্যান্ড দেশটা অনেক কারণেই বিখ্যাত। কিন্তু খাবারের দিক দিয়ে সবচেয়ে অখ্যাত বলা যায়। ভারতে বেড়াতে গেলে টুরিস্টরা মহা-আনন্দে বিরিয়ানি টেস্ট করে। ইতালি গেলে অরিজিনাল মোজ্জারেলা চিজের পিজা খায়। বাংলাদেশে এলে ফুচকা খেয়ে চোখের পানি-নাকের পানি এক করে। কিন্তু ফিনল্যান্ডে এক ‘সালমিয়াক্কি’র বাইরে কোনো খাবার নিয়ে মাতামাতি করতে দেখি না। যে কয়েকটা দেশ ঘোরা হয়েছে, ফিনিশ কুইজিন নামে কোনো রেস্টুরেন্টও চোখে পড়েনি।
ভার্সিটির রেস্টুরেন্টে প্রথম ফিনিশ খাবার টেস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে এর কারণ বুঝতে পারলাম। ডিশের নাম ফিনিশ স্টাইল চিকেন উইথ ডার্ক রাইস। চিকেন মুখে দিয়ে মনে হলো পাউরুটি খাচ্ছি। মুরগির মাংসের মতো অতি সুস্বাদু খাবারকে যারা রান্নার গুণে স্বাদহীন করে ফেলতে পারে তাদের খাবার অখ্যাত হবে না তো কাদেরটা হবে? প্রথম লাঞ্চ খেয়ে প্রমাদ গুনলাম। সর্বনাশ। এই পাউরুটি স্টাইল চিকেন আর আধাসেদ্ধ রাইস খেয়ে থাকতে হবে দুই বছর? আমার রান্নাবান্নার দৌড় নুডলস পর্যন্ত। আদরের ছেলে হওয়ার কারণে কিনা কে জানে, বাসায় জীবনে রান্নাবান্নার কাছে ঘেঁষতে হয়নি। এখানে শুরুর দিকে কয়েকবার ডিম ভাজতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছি। খিচুড়ি রান্নার পর সেটা কালচে তরল পদার্থে পরিণত হয়েছে।
প্রথম সপ্তাহ শুধু নুডলস খেয়ে কাটিয়ে দিলাম। দুপুরে ভার্সিটিতে লাঞ্চের নামে বিচিত্র জিনিসপাতি খাই। রাতে খাই বিট লবণ মাখানো নুডলস। গরম গরম মুরগির ঝোলের সঙ্গে মিনিকেট চালের ভাত খাওয়ার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে। বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা রান্না পারে, তাদের সুখী মানুষ মনে হয়। নানা রকম রান্না করে তারা ফেসবুকে ছবি দেন। কোনোদিন আলু ভাজি, কোনোদিন মুরগি। একদিন দেখলাম পোলাও আর ডিমের কোরমা। মনে মনে নিশ্চিত হয়ে গেলাম রান্নার দিক দিয়ে আমার মতো মূর্খ ফিনল্যান্ডে এবার দ্বিতীয়টি আসেনি। খাবারদাবার নিয়ে এই সংগ্রাম কতদিন চলত কে জানে। দ্বিতীয় সপ্তাহের কথা। একদিন লাঞ্চ খেতে যাচ্ছি দুপুরে। হঠাৎ আমার ফিনিশ বন্ধু পাওলি বলল, হাসান, তুমি কি বারবিকিউ চিকেন পছন্দ করো?
বলতে ইচ্ছা করল, করি। কিন্তু তোমার দেশেরটা না। তোমরা বারবিকিউতে কোনো মসলা দাও না। শুধু লবণ ছিটিয়ে আগুনে ঝলসাও। এটাকে বারবিকিউ বলো কোন সাহসে? মুখে বললাম, ঝাল ঝাল বারবিকিউ চিকেনের জন্য আমি এই মুহূর্তে ১০ ইউরো পর্যন্ত পে করতে রাজি আছি। পাওলি হাসিমুখে বলল, ১০ ইউরোর দরকার নেই। আজকে আভা রেস্টুরেন্টে চিকেন বারবিকিউ আছে। নরমাল আড়াই ইউরোতেই খেতে পারবে। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, আভা রেস্টুরেন্টটা কোথায়? সেখানে বারবিকিউ-ই বা আসবে কোত্থেকে। সে অবাক হয়ে বলল, তুমি আভা চেনো না? ইউনিভার্সিটির ১২টা রেস্টুরেন্টের একটা। চিকেনের ভালো আইটেমগুলো সাধারণত এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়। ঢোক গিলে বললাম, ভার্সিটিতে ১২টা রেস্টুরেন্ট? আমি তো শুধু একটার কথা জানি। সেন্ট্রাল স্টেশন।
পাওলি হাসতে হাসতে বলল, তুমি আমাদের ‘অখাদ্য’ খাচ্ছো প্রতিদিন? সেন্ট্রাল স্টেশনে তো বেশির ভাগ ফিনিশ খাবার পাওয়া যায়। আমি নিশ্চিত সেটা তোমার ভালো লাগে না!
গেলাম আভা রেস্টুরেন্টে। এটার সামনে দিয়ে বেশ কয়েকবার হেঁটে গেছি। আমার ধারণা ছিল, এটা শুধু স্টাফ ও টিচারদের জন্য। চিকেন বারবিকিউ খেয়ে চমৎকৃত হলাম। আমাদের মতো না হলেও বেশ ভালো। এটা খেয়ে বেশ থাকা যায়।
আমি পাওলিকে ধন্যবাদ দিলাম। বললাম, ‘আমি ফিনল্যান্ড এসেছি এক সপ্তাহ হয়েছে। এর মধ্যে এত চমৎকার খাবার আর খাইনি। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’ ‘ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। চলো তোমাকে বাকি রেস্টুরেন্টগুলো চিনিয়ে দিচ্ছি।’ ফিনল্যান্ডে আমার সেই দিন রেস্টুরেন্ট পরিচিতি দিবস হয়ে গেল। পাওলি আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব রেস্টুরেন্ট চেনাল। রেস্টুরেন্টগুলো ভার্সিটির বিভিন্ন কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রত্যেকটায় আলাদা আলাদা ডিশ থাকে প্রতিদিন। একেক রেস্টুরেন্টে আবার একেক থিম। যেমন- স্টোরিজ রেস্টুরেন্টে একটু হালকা ধরনের খাবার বেশি থাকে। ব্যালেন্সে স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি। আভায় ভারী ও স্পাইসি ধরনের খাবার বেশি। কাস্তারিতে পিজা, বার্গার পাওয়া যায়। বাকিগুলোতে ফিনিশ খাবারের প্রাধান্য বেশি। আমি যে রেস্টুরেন্টে এই কয়দিন খেয়েছি সেটার নাম সেন্ট্রাল স্টেশন। ক্যাম্পাসের ঠিক মাঝামাঝি, সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট। সাধারণত এখানে ফিনিশ স্টাইলের খাবার বেশি থাকে। যার বেশির ভাগের মধ্যে আবার থাকে পর্ক। ইউরোপিয়ান স্টুডেন্টদের কাছে এটা বেশি জনপ্রিয়। আমাদের জন্য আভাই বেস্ট মনে হয়েছে।
রেস্টুরেন্ট পরিচিতি পর্ব শেষ হতে হতে দিন শেষ হয়ে গেল। আমার মুখে হাসি ফুটেছে। গাধার মতো এতদিন শুধু এক রেস্টুরেন্টে খেয়েছি। শুধু তাই না। পাওলি ‘আপো’ নামে একটা অ্যাপ নামিয়ে দিল ফোনে। ভার্সিটির নিজস্ব অ্যাপ। ক্লাস শিডিউল, ম্যাপের পাশাপাশি প্রত্যেকটা রেস্টুরেন্টের খাবারের আইটেম দেওয়া আছে। (ডাউনলোড করার পর জানলাম সবাই শুরুর দিন থেকে এই অ্যাপ ধুমসে ইউজ করছে। আমি জানতামই না। রান্নাবান্না ছাড়াও যে আমি আরো কিছু বিষয়ে মূর্খ তার প্রমাণ)। এই অ্যাপ আমার ‘খাবারের দরজা’ খুলে দিল। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আজ কোন রেস্টুরেন্টে কী আছে। পরিচিত খাবার বা চিকেন থাকলে আনন্দের সীমা থাকে না। বিপুল আনন্দ নিয়ে ভার্সিটি যাই। আড়াই ইউরোতে প্লেট ভর্তি করে খাবার নিই। হাফ ব্যুফে সিস্টেম। একেবারে যত ইচ্ছা নেওয়া যায়। মাংস-টাংস থাকলে এত বেশি নিই যে প্লেট উপচে ট্রেতে পড়ে যায় কিছু। সাইড প্লেটে উঁচু করে নিই নানা রকম সালাদ। ডেজার্ট থাকে ব্রেড আর বাটার। প্রতি লাঞ্চে দুই গ্লাস পর্যন্ত ড্রিংকস নেওয়া যায়। আমি নিই সেকামেহু (আঙুরের জুস। স্বাদ অনেকটা আমাদের রুহ আফজার মতো) আর দুধ। সব মিলিয়ে ভূরিভোজ যাকে বলে।
অকস্মাৎ লাঞ্চ নিয়ে আমার এই বাড়াবাড়ির কারণ কি? কারণ হলো, আমি আবিষ্কার করলাম, সময়মতো এবং পরিমাণমতো লাঞ্চ করতে পারলে রাতে আর খিদে লাগে না। শুনতে সহজ মনে হচ্ছে। কিন্তু রাতে খিদে না লাগা আমার জন্য বিরাট ব্যাপার। ডিনারের দরকার হয় না। রান্নাবান্না নামক বিকট যন্ত্রণার হাত থেকে বেঁচে যাই। বাজার করা নামক যন্ত্রণার হাত থেকে বেঁচে যাই। বাজারের পয়সা বেঁচে যায়। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর হাতে অফুরন্ত সময় থাকে। স্কুলে বাক্য সংকোচন পড়েছিলাম। একবেলা আহার করেন যিনি—একাহারি। আমি একাহারি হয়ে গেলাম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ ভালোই চলল একাহার। দুপুরের দিকে ঠেসে লাঞ্চ খাই। বেশির ভাগ দিন আহারের পর নড়াচড়া করতে পারি না। কমনরুমের সোফায় গিয়ে বসে হাঁসফাঁস করি। মাসের শেষে আমার ওজন দেড় কেজি বেড়ে গেল। এই এক মাস তেমন রান্না করিনি বললেই চলে। এরপর রোজার ঈদ এলো। ঈদের এক সপ্তাহ পর উইকেন্ডে অউলু থেকে চারশ মাইল দক্ষিণে তাম্পেরে শহরে ঘুরতে গেলাম। সেখানে আমার এক আন্টি থাকেন। আমি রান্নাবান্না করি না শুনে অধীর আগ্রহে আমাকে খাওয়ানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। খাওয়ার আগ্রহেই কিনা কে জানে, আমি দুদিনের জন্য তাম্পেরে গেলাম। দুদিনের তাম্পেরে ভ্রমণে যে পরিমাণ খেলাম সেটা যেকোনো খাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেডেল জেতানোর জন্য যথেষ্ট। ঝাল মুরগির মাংস, গরুর মাংস যে এত সুস্বাদু হতে পারে আগে জানা ছিল না। প্রত্যেক বেলা খাওয়ার পর বলতে ইচ্ছা করছিল, অপূর্ব! বাংলাদেশি রাঁধুনির সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোনোকিছুর তুলনা চলে না!
দুদিন দেশি রান্না খেয়ে আমার এক মাসের একাহারি জীবন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। চুলোয় যাক আড়াই ইউরোর ব্যুফে। দিনভর এসব খেলে শুধু পেট ভরবে। মন ভরবে না। সিদ্ধান্ত নিলাম, রান্না এবার শুরু করতেই হবে। কল টু অ্যাকশন। দেশ থেকে স্যুটকেস-ভর্তি করে মসলা নিয়ে এসেছি। কোনটা কী মসলা আমার কোনো ধারণা নেই। বাসা থেকে কৌটার ওপর লেবেল লিখে দিয়েছে—আদার গুঁড়া, রসুনের গুঁড়া, ধনিয়ার গুঁড়া ইত্যাদি। মনে মনে বাসার লোকজনকে ধন্যবাদ দিলাম। এগুলো যখন জোর করে লাগেজে ভরা হচ্ছিল, তখন আমি গজগজ করতে করতে বলেছিলাম, যতসব আদিখ্যেতা! শুধু শুধু ওজন বাড়াচ্ছে।
এসব মসলা আংশিক ব্যবহার করেছিলাম শুরুর দিকে। খিচুড়ি রানতে গিয়ে। যেটা কদাকার তরল পদার্থে রূপ নিয়েছিল। এবার আঁটঘাঁট বেঁধে নামলাম। গোটাদশেক ইউটিউবে ভিডিও দেখলাম। মিশন মুরগির মাংস রান্না। সঙ্গে পোলাও। আম্মু লাইভে থেকে এ টু জেড ইন্সট্রাকশন দিল। রানার শুরুতেই ভুরভুর করে সুগন্ধ বের হতে লাগল। সেই সুগন্ধেই কিনা কে জানে, পাশের বাসা থেকে আমার চায়নিজ বন্ধু শিয়াং শিয়াং জু এসে হাজির। সে একদিন আমাকে চায়নিজ রেঁধে খাইয়েছিল। রেস্টুরেন্টে খাওয়া চায়নিজের সঙ্গে তার চায়নিজের কোনো মিল নেই। সুজির মতো সেই অখাদ্য খেয়ে আমি বলেছিলাম, অপূর্ব! আমিও তোমাকে দাওয়াত করে একদিন বাংলাদেশি খাওয়া খাওয়াব।
সেই দিন আজকেই আসবে কে জানত। যা-ই হোক, শিয়াংকে বসিয়ে রেখে রান্না শেষ করলাম। পোলাও আর মুরগি মিলিয়ে রান্না শেষ করতে তিন ঘণ্টা সময় লাগল। রাত ১২টার দিকে শিয়াংকে নিয়ে খেতে বসলাম। মুরগির রানে প্রথম কামড় দিয়ে মনে হলো, আমার ফিনল্যান্ড আসা সার্থক। ফিনল্যান্ডে এসেছি বলেই এই অসাধারণ খাওয়া খেতে পারছি। আমি নিজে এমন রাঁধতে পারব এক মাস আগেও কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না। শিয়াং দ্বিতীয়বার চূড়ার মতো করে রাইস নিল। মুরগির রান নিল। মেয়েমানুষ এত খায় কীভাবে কে জানে! খেতে খেতে সে ভ্রু কুঁচকে বলল, তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে। আমি নিশ্চিত তুমি একজন দক্ষ শেফ। এই রান্না দিয়ে তুমি যেকোনো দোকানে শেফের চাকরি নিতে পারো।
আমি কিছু বললাম না। দাঁত বের করে হাসলাম। খাওয়া শেষ হওয়ার পর বললাম, এই রান্নার ক্রেডিট আমার আম্মুর। পুরো রান্নায় ভিডিওতে সে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে। তুমি চাইলে তাকে ধন্যবাদ দিতে পারো। আম্মুকে ভিডিও কল দিলাম। শিয়াং আম্মুকে বলল, আমি ফিনল্যান্ডে আসার পর এত ভালো খাবার খাইনি। তোমার ছেলে হাসান একজন ভালো শেফ। তোমাকে ও হাসানকে ধন্যবাদ।
এরপর আরো দুবার চিকেন রেঁধেছি। দুবারই শিয়াং-এর সঙ্গে শেয়ার করতে হয়েছে। কিন্তু একবারও প্রথমবারের মতো ভালো হয়নি। বুঝলাম, আমি রাতারাতি শেফ হয়ে যাইনি। প্রথমবার নেহাত ছিল ‘বেগিনার্স লাক।’ শিয়াংও বোধহয় কিছুটা হতাশ। সে ঘন ঘন আমাকে ডিনারের দাওয়াত দিতে লাগল। এই আশায় যে আমি আবারও ‘দ্য গ্রেট চিকেন’ (তার ভাষায়) রাঁধব এবং তাকে দাওয়াত দেব।
গ্রেট চিকেন আর হলো না। কিন্তু পুরো ব্যাপারটায় আমার লাভও কম হলো না। আমার খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এলো। টুকটাক রান্না শুরু করলাম। কখনো ডিম ভাজি, কখনো মুরগি, কখনো সবজি। একদিন সাহস করে খিচুড়িও রেঁধে ফেললাম। খুব একটা খারাপ হলো না। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরে এলাম। লাঞ্চের ভূরিভোজ কমে গেল। ডিনারের জন্য বাসায় রান্না শুরু করলাম।
বাংলাদেশিদের মধ্যে কমই দেখেছি ভার্সিটিতে লাঞ্চ করতে। বেশির ভাগ হয় বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসেন। না হলে বাসায় গিয়ে খেয়ে আসেন। ভার্সিটির খাবারে তাঁরা কোনো স্বাদ পান না। শুরুর দিকে আমারও তাদের মতো অবস্থা ছিল। কিন্তু মাস তিনেক পর ধারণা বদলে গেল। রান্নাটা সড়গড় হওয়ার পর আমিও বাসায় লাঞ্চ করতে পারতাম। কিন্তু কেন যেন ইচ্ছা করল না। ভার্সিটিতে লাঞ্চের বৈচিত্র্য আমার বেশি ভালো লাগে। বিচিত্র রকম খাবার, তাদের বিচিত্র স্বাদ ভালো লাগে। হঠাৎ হঠাৎ দারুণ সুস্বাদু কোনো খাবার কপালে জোটে, যার নাম আগে কখনো শুনিনি। আবার মাঝে মাঝে এমন কুৎসিত খাবার জোটে যে একটু মুখে দিয়ে বাকিটা ফেলে দিতে হয়। অ্যাপ দেখে ঠিক করি আজ কোন রেস্টুরেন্টে খাব। কোন খাবারটা ভালো হবে। পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা অন্যরকম আকর্ষণ আছে, যা আমি এখনো উপভোগ করি।