বিড়াল পোষ মানে কবে থেকে?
পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদর আদিকাল থেকেই। কিন্তু কতটা আদিকাল থেকে, তা হলফ করে বলতে পারবেন না কেউই। কারাই বা প্রথম পোষা প্রাণী হিসেবে ‘বাঘের মাসি’খ্যাত বিড়ালকে পুষতে শুরু করল, সেটাও বলা এখন সম্ভব নয়। বিড়ালপ্রেমীরা এসব প্রশ্ন নিয়ে মাথা না ঘামালেও গবেষকদের এ নিয়ে চিন্তার যেন অন্ত নেই।
ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিম এশিয়া এবং প্রাচীন মিসরে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে থেকেই বিড়াল পোষা শুরু হয়।
বিড়ালের পাঁচটি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ফেলিস সিলভেসটারিস প্রজাতির বিড়ালদের স্বভাবের সঙ্গে বর্তমানে গৃহপালিত বিড়ালদের স্বভাবগত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বিশাল এলাকাজুড়ে এই বিড়ালদের বিচরণ ছিল। তাই অন্যান্য প্রজাতির বিড়ালের ভিড়ে ফেলিস সিলভেসটারিস প্রজাতির বিড়ালের অস্থিগুলো আলাদা করতে গিয়ে গবেষকদের পড়তে হয়েছে কঠিন ধাঁধায়।
আর এ ধাঁধার সমাধান করতে গিয়ে বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব লিউভেনের বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০ বিড়ালের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার মাটি খনন করে বিড়ালের ডিএনএ নমুনা উদ্ধার করা হয়। এসব ডিএনএ নমুনার বয়স একশ থেকে নয় হাজার বছরের পুরোনো।
ন্যাচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভাল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত, জেনেটিক গবেষণা প্রমাণ করে যে আফ্রিকান বন্য বিড়াল ফেলিস সিলভেসটারসিস থেকেই বর্তমান গৃহপালিত বিড়ালের উৎপত্তি। এ ছাড়া মিসর ও পশ্চিম এশিয়াতেও তখন ফেলিস সিলভেসটারিস গোত্রের বিড়াল ছিল। পশ্চিম এশিয়ার কৃষকরা প্রথমে বন্য এই বিড়ালের উপস্থিতি ভালোমতই গ্রহণ করে নেন। কারণ, এই বিড়াল তাদের ফসলকে ইঁদুর ও ফসলের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করতে থাকে।
মানুষের সংস্পর্শে এসে বিড়ালদের আচরণ এবং তাদের অভ্যাস পরিবর্তন হতে থাকে। ধীরে ধীরে তারা বন্য বিড়াল থেকে গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হয়। তখন কৃষকরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার সময় তাদের গৃহপালিত বিড়ালকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। নাবিকরা তাদের জাহাজের মালামাল ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচাতে বিড়াল পুষতেন। এভাবেই গৃহপালিত বিড়াল দ্রুত ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকরা বাল্টিক সাগরের ভাইকিং সাইটে মিসরীয় বিড়ালদের বসবাসের প্রমাণ পেয়েছেন।
গবেষক ক্লাউডিও অটটোনি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘এটা এখনো অস্পষ্ট, পশ্চিম এশিয়ার পোষা বিড়ালই কি মিসরে এসেছিল, নাকি মিসরের বিড়ালের আশ্রয় জুটেছিল পশ্চিম এশিয়াতে। অধিকতর গবেষণায় হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে এর উত্তর।’
ডিএনএ গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুরুর দিকে গৃহপালিত বিড়ালগুলোর শরীরে ছোপ ছোপ দাগ ছিল। ডোরাকাটা দাগসহ বিড়ালের উৎপত্তি ঘটে মধ্যযুগে এসে।