উত্তরাধিকার সনদ নেওয়া যাবে কীভাবে?
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন করিম হোসেন। একটি তফসিলি ব্যাংকে জমানো কিছু টাকা রেখেছিলেন তিনি। আশা ছিল, এগুলো দিয়ে শেষ বয়সে কোনো কাজ করবেন। কিন্তু হঠাৎই মৃত্যু হওয়ায়, তার সে আশা আর পূরণ হয়নি। দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লেন প্রয়াত করিম হোসেনের স্ত্রী।
স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যাংক থেকে টাকাও ওঠাতে পারছিলেন না মিসেস করিম। ব্যাংক থেকে তাঁকে জানানো হয় যে, তাঁর স্বামীর নামে জমানো টাকা ওঠাতে চাইলে তাঁদের উত্তরাধিকার সনদ জমা দিতে হবে। এই সনদ ছাড়া ব্যাংকের টাকা তোলা যাবে না।
সাধারণত কোনো ব্যাংক হিসাব করার সময় গ্রাহক যদি কোনো নমিনি করে না যান, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে হয় উত্তরাধিকারীদের। তবে এখন উত্তরাধিকারিদের সনদ নেওয়ার কিছু আইনি প্রক্রিয়া জানা থাকলে, এ ধরনের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
সনদ পেতে আবেদনের নিয়ম
উত্তরাধিকার সনদ তুলতে হয় সাধারণত আদালত থেকে। প্রয়াত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তোলার জন্য জেলা জজ আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এ সনদ তুলতে হয়। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাদের পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এর সঙ্গে চেয়ারম্যান বা কমিশনার কর্তৃক ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা চেয়ারম্যান অফিস বা কমিশনারের কাছ থেকে প্রয়াত ব্যক্তির মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। প্রয়াত ব্যক্তি কোন ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে একটি সনদ (ব্যালান্স কনফারমেশন লেটার) ওঠাতে হবে এবং আদালতে জমা দিতে হবে।
এ আবেদন করার পর আদালত থেকে উত্তারাধিকার সনদের আবেদন মঞ্জুর করলে কোর্ট ফি দাখিল করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যাংক থেকে কত টাকা ওঠানোর জন্য আবেদন করছেন, তার ভিত্তিতে কোর্ট ফি নির্ধারিত হয়।
দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত এক শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থের ওপর দুই শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। এভাবে আইনিভাবে এগোলে উত্তরাধিকার সনদ পাওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকে রক্ষিত টাকা সহজেই তোলা যাবে।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট