‘চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা’, চালকসহ গ্রেপ্তার ৫
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসের মধ্যে ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজের ছাত্রী রুপা খাতুনকে (২৫) গণধর্ষণ শেষে হত্যার মামলায় চালক ও তাঁর সহকারীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে তরুণীর ছবি ও পরনের সালোয়ার কামিজ দেখে শনাক্ত করেন তাঁর বড় ভাই হাফিজুর রহমান। গত শুক্রবার রাতে ওই কলেজছাত্রী বগুড়া থেকে ছোঁয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। পরে সড়কের পাশে মধুপুরে বন থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন শনিবার অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তাঁর লাশ দাফন করা হয় টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে।
রূপা খাতুন ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে এলএলবি অধ্যয়নরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আছানবাড়ী গ্রামে।
মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় সড়কের পাশে বনাঞ্চলে তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকার খবর পায় মধুপুর থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসে। শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করে অপরাধীরা নিরাপদ ভেবে লাশ সড়কের পাশে বনের মধ্যে ফেলে রেখে যায় বল ধারণা করে পুলিশ।
নিহতের বড় ভাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে গতকাল রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে লাশের ছবি ও পরনের কাপড় দেখে রুপাকে চিনতে পারেন। পরে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে অভিযানে নামে পুলিশ।
তরুণীর বড় ভাই হাফিজুর প্রামাণিক জানান, তাঁর ছোট বোন রুপা খাতুন স্নাতক শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি বিষয়ে পড়ছিলেন। পাশাপাশি তিনি শেরপুর জেলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রোমোশনাল ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে তিনি বগুড়া যান। পরে পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে রওনা দেন। তাঁর সেই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান এবং রুপা ওই বাসেই ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি সঠিক সময়ে ময়মনসিংহ না পৌঁছানোয় তাঁর সহকর্মীরা মোবাইলে ফোন করেন। এক যুবক ফোনটি রিসিভ করেন এবং রুপা ভুল করে ফোনটি ফেলে রেখে গেছেন বলে জানিয়ে কেটে দেন। এর পর থেকে ফোনটি বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার সকালে কর্মস্থলে না পৌঁছানোয় ইউনিলিভার বাংলাদেশের শেরপুর অফিস থেকে রুপার বড় ভাই হাফিজুর প্রামাণিকের মোবাইলে রুপা কর্মস্থলে না ফেরার বিষয়টি জানানো হয়। পরে রুপার মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে তাঁর বড় ভাই হাফিজুর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, লাশটি পাওয়ার পর প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন দেখেই এটিকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগে ঘটনার পরদিনই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়। এর পর থেকেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত থাকে। সোমবার রাতে নিহত তরুণীর পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর তাঁর বড় ভাইয়ের দেওয়া তথ্যর ওপর ভিত্তি করে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরপর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ওই বাসের চালক হাবিবসহ (৩৫) পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।