‘চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা’য় তিনজনের ‘স্বীকারোক্তি’
চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা ঘটনায় তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আজ মঙ্গলবার রাত সোয়া ৭টার দিকে টাঙ্গাইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম ও শামছুল হকের পৃথক আদালতে তিন আসামিকে হাজির করা হয়। তাঁরা হলেন বাসচালকের সহকারী আকরাম, শামীম ও জাহাঙ্গীর।
মামলার বাদী মধুপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম আদালতে আসামিদের স্বীকারোক্তির বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া অপর দুই আসামি বাসচালক হাবিব ও সুপারভাইজার সবেদ আলীকে আগামীকাল বুধবার আদালতে হাজির করা হবে।
ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজের ছাত্রী রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে মধুপুর থানার পুলিশ।
পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, গত শুক্রবার রাতে তরুণী বগুড়া থেকে ছোঁয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। রাতে মধুপুরে বনের ভেতর সড়ক থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন শনিবার নিহত তরুণীর পরিচয় না পেয়ে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ দাফন করা হয় টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে। গত সোমবার রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে তরুণীর ছবি ও পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করেন তরুণীর বড় ভাই হাফিজুর রহমান।
মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে মধুপুরের উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকার বনাঞ্চলে এক তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকার খবর পায় মধুপুর থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে নেওয়া হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে অপরাধীরা তরুণীর লাশ সড়কের পাশে বনে ফেলে রেখে যায়।
নিহতের বড় ভাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে গতকাল সোমবার রাতে মধুপুর থানায় উপস্থিত হয়ে লাশের ছবি ও পরনের কাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন। পরে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যর ওপর নির্ভর করে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
নিহত তরুণী বড় ভাই হাফিজুর প্রামাণিক জানান, তাঁর ছোট বোন রূপা খাতুন স্নাতক শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি শেরপুর জেলায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে তিনি বগুড়া যান। পরে পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে রওনা দেন। তাঁর সেই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গাতে নেমে যান এবং ময়মনসিংহের উদ্দেশে যান রূপা। কিন্তু সঠিক সময়ে ময়মনসিংহ না পৌঁছানোয় সহকর্মীরা মোবাইলে ফোন করলে এক যুবক ফোনটি রিসিভ করেন এবং রূপা ভুল করে ফোনটি ফেলে রেখে গেছেন বলে জানিয়ে কেটে দেন। এর পর থেকে ফোনটি বন্ধ রয়েছে।
শনিবার সকালে কর্মস্থলে না পৌঁছানোয় সহকর্মীরা রূপার বড় ভাই হাফিজুর প্রামাণিকের মোবাইলে বিষয়টি জানান। বড় ভাই ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম, এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, লাশটি পাওয়ার পর প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট দেখেই এটিকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার কথা উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করা হয়।
এরপর থেকেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত থাকে। সোমবার রাতে নিহত তরুণীর পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর তাঁর বড় ভাইয়ের দেয়া তথ্যর ওপর ভিত্তি করে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরপর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।