সাজা দ্রুত কার্যকর করতে রূপার ভাইয়ের আবেদন
চলন্ত ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার জাকিয়া সুলতানা রূপার বড় ভাই হাফিজুর আসামিদের সাজা কার্যকর করতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। আজ সোমবার টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে রায় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আবুল মনসুর মিয়া রায় ঘোষণা করেন। রায়ে চারজনের ফাঁসি ও একজনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ছোঁয়া পরিবহন বাসটি মালিকানা পরিবর্তন করে নিহত রূপার পরিবারকে দেওয়ার আদেশও দেওয়া হয়।
নিহত রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এতে আমি খুশি। আমি আমার মন থেকে বলছি যে, আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। এই বাংলাদেশে ন্যায়বিচার যে আছে এটাই আজকে প্রমাণিত হলো। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি এজন্য ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, ধন্যবাই জানাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ সব পর্যায়ের নেতাদের। ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমার পাশে যারা ছিল, সারা বাংলাদেশের মানুষ। সমস্ত ইলেকট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইদের। ধন্যবাদ জানাই আন্তর্জাতিক মানের মানবাধিকার সংস্থা।’ এই রায়টা যেন বহাল থাকে। ওরা যেখানেই যাক, রায়টা যেন বহাল থাকে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন রায়টা যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’
নিহত জাকিয়া সুলতানা রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান। ছবি : এনটিভি
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্তবাসে কলেজছাত্রী রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ ও একজনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ফাঁসির আসামিরা হলেন বাসের শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) ও চালক হাবিবুর (৪৫) । কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হলেন বাসের সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫)।
চাঞ্চল্যকর এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রূপার পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তবে আসামীপক্ষের আইনজীবী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলেছেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করেন আসামিরা। বাসেই তাঁকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রূপার মরদেহ ফেলে রেখে যান তাঁরা। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত হিসেবে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। পরের দিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করে। সংবাদ মাধ্যমে ছবি দেখে তাঁর ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে রূপাকে শনাক্ত করেন।
২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর এবং চালক হাবিবুর ও সুপারভাইজার সফর আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঘটনার ১৭১ দিন পর আজ চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রূপার পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী শামিম চৌধুরী দয়াল। ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও বলেন তাঁরা।
এই রায়ে খুশি হয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরাও। এর মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। ঘটনার ১৭১ দিন পর আজ চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।