বংশগত কারণেও পেরিমেনোপজ হতে পারে
নারীর শরীরে এই পেরিমেনোপজের সমস্যা বিরল নয়। মেনোপোজের ঠিক আগের পর্যায়ে শরীরে ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে বা একদমই নিঃসৃত না হলে তাকে পেরিমেনোপজ বলা হয়। মেনোপজ হয় সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ৪৫ বছরের আগেই পেরিমেনোপজ হতে পারে। মেনোপজের সঙ্গে সঙ্গে বিষণ্ণতা বা মন খারাপসহ শরীরে নানা অসুবিধা হয়ে থাকে।
লক্ষণ
অনিয়মিত মাসিক : এই সময় মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে। মাসিকের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কখনো দীর্ঘ হয়। আবার কখনো কম সময়ের জন্য হতে পারে।
হট ফ্লাশ হওয়া : ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ নারীর পেরিমেনোপজের সময় হট ফ্লাশ হয়। এই সময় অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়। শরীর থেকে বারবার ঘাম নিঃসৃত হয়।
মানসিক অবস্থার পরিবর্তন : পেরিমেনোপজের অন্যতম লক্ষণ মানসিক অবস্থার পরিবর্তন। এ সময় সামান্য কারণে রোগী বিষণ্ণতায় ভোগে, কিছু ভালো লাগে না এবং অধিকাংশ সময় মেজাজ খিটখিটে থাকে।
যৌন চাহিদার পরিবর্তন : এ সময় অনেক নারীর ক্ষেত্রেই যৌন চাহিদার পরিবর্তন দেখা যায়। অনেকেরই ইন্টারকোর্সের সময় ব্যথার অনুভূতি হয়।
উর্বরতা কমে যায় : এ সময় নারীদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমে যায়।
বুক ধড়ফড় করা : অনেকের বুক ধড়ফড় করে। অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে।
হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে : পেরিমেনোপজের সময় শরীরে কোলেস্টেরল লেভেলের পরিবর্তন হয়। শরীরে ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে যাওয়ায় রক্তে লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ভেজাইনাল শুষ্কতা : এ সময় ভেজাইনাল শুষ্কতা দেখা যায়। এ ছাড়া ভেজাইনাল টিস্যু লুব্রিকেন্ট বা ইলাস্টিসিটি হারিয়ে বিভিন্ন রকম ইনফেকশন দেখা দেয়।
হাড় ক্ষয়ে যায় : ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে যাওয়ার ফলে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কেন হয়
• যেসব নারীর পরিবারে আগে মেনোপজ হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, সেসব নারীর ক্ষেত্রে পেরিমেনোপজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• ক্যানসারের চিকিৎসা হলে অনেক নারীর ক্ষেত্রে পেরিমেনোপজ হয়ে থাকে।
• অনেক সময় জরায়ুর বিভিন্ন ধরনের অপারেশন বা হিস্টেরেকটমি অপারেশনের ফলে পেরিমেনোপজ হতে পারে।
সমস্যা
পেরিমেনোপজের সময় অনিয়মিত মাসিকের কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। মাসিক চলাকালীন বেশি রক্তপাত হওয়া বা রক্তপাত কম হওয়া। আট দিনের বেশি রক্ত ঝরা। মাসিকের নির্ধারিত সময় ছাড়াও অন্য সময় রক্তপাত হওয়া।
রোগনির্ণয়
ইস্ট্রোজেন লেভেল, থাইরয়েড হরমোন প্রোফাইল পরীক্ষার মাধ্যমে এর রোগ নির্ণয় করা হয়।
কী করবেন
• কয়েক মাস ধরে লক্ষ রাখুন মাসিকের সময় কী কী সমস্যা হচ্ছে আপনার।
• অনিয়মিত মাসিক বা বেশি রক্তপাতের জন্য কোনো ওষুধ খেয়ে থাকলে ডাক্তারকে জানান। কোনো ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেলে ডাক্তারকে জানান।
• সমস্যাগুলো লিখে রাখুন যেন ডাক্তারের কাছে পুরোটা বলতে পারেন।
জীবন-যাপনে পরিবর্তন
পেরিমেনোপজের সময় যেহেতু বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ সময় বেশি করে শাকসবজি ও ফল খেতে হবে। ক্যালসিয়ামসম্বৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। লো ফ্যাট ও হাই ফাইবার-জাতীয় খাবার খাবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। দুই বেলা নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে যেসব চাকরিতে চাপ বেশি সেটি এড়িয়ে চলুন।
চিকিৎসা
এ সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা হরমোন থেরাপি দিয়ে থাকেন। ভেজাইনাল শুষ্কতার জন্য লোকাল হরমোন অ্যাপলিকেশন করা হয়। হরমোনযুক্ত ভেজাইনাল রিং পড়ানো হয়ে থাকে। ক্রিম ব্যবহার করতে বলা হয়। হাড়ের ব্যথার জন্য ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট সেবন করতে বলা হয়। নিউরোজেমিক ব্যথা হলে কাভাপেনটেন ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। যদি ডিপ্রেশন হয় তবে এসব চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়। তবে কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
পেরিমেনোপজে অনেক সময় লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে দেখা দেয়। শরীরের হরমোনের তারতম্যের বিষয়গুলো আমরা প্রথমে বুঝতে পারি না। তাই স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোনো অসুবিধা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলেই এ সময়টায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতি অনেকটাই এড়ানো যাবে।
ডা. সামছাদ জাহান শেলী : সহযোগী অধ্যাপক, বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল