নারীদের জন্য ১০ স্বাস্থ্যকর নাশতা
সারা দিন সুস্থ থাকতে চাইলে সকালের নাশতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই একটা জায়গায় সব সময়ই আমরা ভুল করি। আর দোষ চাপিয়ে দিই ব্যস্ততার ওপর। প্রতিদিন একই সময়ে সকালে নাশতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। সাধারণত সকাল ৮টার দিকে নাশতা খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। অনেক নারীর সংসার আর কাজের ব্যস্ততার কারণে সকালের নাশতা খাওয়া হয় না। অথচ সারা দিন তাঁদের ওপর অনেক কাজের চাপ যায়। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে সকালের নাশতা খুবই জরুরি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার লাইফস্টাইল বিভাগে আইপিঙ্কের লাইফস্টাইল নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট তৃপ্তি গুপ্ত নারীদের ১০ ধরনের স্বাস্থ্যকর নাশতা সম্পর্কে জানিয়েছেন।
১. ওটস শক্তি জোগায়
ওটস খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। প্রতিদিনের নাশতায় ননিমুক্ত দুধের সঙ্গে ওটমিল মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা কম লাগার পাশাপাশি পেট ভরা রাখে। তা ছাড়া মোটা হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে। সঙ্গে চেরি ফল মিশিয়ে খেতে পারেন। যেকোনো সুপারশপে প্যাকেটজাত ওটস কিনতে পাওয়া যায়। এক কাপ গ্রিন টি আপনার এই নাশতাকে পরিপূর্ণ করবে। যাঁরা ডায়েট নিয়ে চিন্তায় থাকেন, তাঁরা এই নাশতা নির্দ্বিধায় খেতে পারেন।
২. আটার রুটি প্রোটিনসমৃদ্ধ
আটার রুটির সঙ্গে চিজ ওমলেট খেতে পারেন। চিজ ওমলেট বানানোর সময় মাশরুম দিয়ে নিন। আটার রুটি খেলে চর্বি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। সঠিক প্রোটিনের জন্য চিজ ওমলেট বেশ কার্যকর। যাঁদের একটু মোটা হওয়ার ভয় আছে, তাঁরা চিজ কম করে খেতে পারেন। তবে অনেকেরই ধারণা, চিজ খেলে হয়তো মোটা হয়ে যাবেন। এ ভয়ে তাঁরা চিজ একেবারেই খান না। এই ধারণা পুরোপুরি ভুল; বরং অনেক ক্ষেত্রে চিজ চর্বি কাটাতে সাহায্য করে।
৩. শাকসবজির শরবত
সকালে যেকোনো শাক বা সবজির শরবত বা জুস খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মৌসুমি সবজি খাওয়াই ভালো। সঙ্গে ডিমের সাদা অংশের ওমলেট খান। ডিমের সাদা অংশ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটা চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। সঙ্গে ১ টেবিল চামচ কুমড়ার বিচি খান। কুমড়ার বিচিতে যক্ষ্মা রোগের উপসর্গ কেটে যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গ্যাস্ট্রিক রোগের উপশমেও কুমড়ার বিচি বেশ কার্যকর।
৪. গমের আটা ফাইবারসমৃদ্ধ
গমের আটা স্বাস্থ্যসম্মত ও খুবই পুষ্টিকর। কেননা, গমের বাইরের লাল বা বাদামি আবরণে অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। এই আবরণ ম্যাগনেশিয়াম নামক খাদ্য উপাদানে ভরপুর। তাই প্রতিদিন সকালে গমের আটার রুটি খাওয়ার চেষ্টা করুন। সঙ্গে ১ টেবিল চামচের মতো সরিষার বিচি খেতে পারেন। বাসায় তৈরি ফলের জুস স্বাস্থ্যসম্মত হয়। তাই যেকোনো একটি ফল বা কয়েক ধরনের ফলের মিশ্রণে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। ফলের জুস দেহকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে মনে রাখবেন, জুস পানের ১০-১৫ মিনিট পর অন্য খাবার গ্রহণ করা উচিত।
৫. টকদইয়ে আছে পুষ্টি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় টক দই। ঠান্ডা লাগা, সর্দি ও জ্বর না হওয়ার জন্য এটি ভালো কাজ করে। দইয়ের ব্যাকটেরিয়া হজমে সহায়ক। তাই প্রতিদিন সকালে টক দই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সঙ্গে দুটি পরোটা বা রুটি অবশ্যই খাবেন। সবশেষে একটা আপেল খেয়ে নিন। এতে সারা দিন শরীরে কোনো ক্লান্তি ভাব থাকবে না।
৬. নাশতায় নারিকেলের পানি
শরীরের ওজন কমাতে নারিকেলের পানি বেশ কার্যকর। এ ছাড়া নারিকেলের পানি রক্ত চলাচলকে উন্নত করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য হৃৎপিণ্ড-সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তে সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস নারিকেলের পানি খাওয়া বেশ উপকারী। সঙ্গে ডিমের সাদা অংশের ওমলেট এবং গমের আটা রুটি খান। যাঁরা ওজন নিয়ে ভয়ে থাকেন, তাঁরা খুব কম সময়ে এই স্বাস্থ্যকর হালকা নাশতা খেতে পারেন, যা একদিকে আপনার শরীরের পুষ্টিমান বজায় রাখবে এবং মোটা হওয়ার আশঙ্কা থেকে রেহাই দেবে।
৭. ননিমুক্ত দুধের সঙ্গে ফল
গমের রুটির সঙ্গে ননিমুক্ত দুধ বেশ পুষ্টিকর একটি খাবার। ননিমুক্ত দুধ শরীরে মেদ জমতে দেয় না। অথবা দুধের মধ্যে কয়েক ধরনের ফল মিশিয়ে খেতে পারেন, যা শরীরের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৮. সিদ্ধ ডিমে প্রচুর প্রোটিন
গমের রুটির সঙ্গে সিদ্ধ ডিম খান। সিদ্ধ ডিমে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর প্রোটিন আছে। সকালবেলায় নাশতার সঙ্গে সিদ্ধ ডিম খেলে ছয় গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া সিদ্ধ ডিমে আছে ভিটামিন-ডি, যা হাড় ও দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। তাই প্রতিদিন সকালে একটি সিদ্ধ ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ভুট্টা, শিমের বিচি ও মাশরুম হালকা সিদ্ধ করে খেতে পারেন।
৯. তেল ছাড়া সবজি খিচুড়ি
সকালে তেল ছাড়া এক কাপ মাপের সবজি খিচুড়ি খেতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ডাল ও ভাতের চাল দিয়ে তৈরি করুন এই খিচুড়ি। সঙ্গে একটি আপেল অথবা একটি কলা খেতে পারেন। তবে সকাল ৮টার মধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করুন, তাহলে দুপুরের খাওয়ার আগে হজমের জন্য লম্বা একটা সময় পাবেন।
১০. দুধের সঙ্গে ফল ও বাদাম
হাতে যদি একেবারেই সময় না থাকে, তাহলে ননিমুক্ত দুধের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ফল ও বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। বাদামে থাকে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হার্ট, ক্যান্সার ও অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের প্রতিরক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন পারলে একমুঠো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন।