যুদ্ধকথা
আজও ভুলে যাইনি শহীদদের কথা : তৈয়বুর রহমান
দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ তখন চরমে। সব কটি রণাঙ্গনেই পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মার খেতে শুরু করেছে। আমি একজন এফএফ গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে রাজশাহীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধরত। গেরিলা যুদ্ধের কৌশল হচ্ছে শত্রুপক্ষের গতিবিধি লক্ষ রেখে আচমকা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া এবং শত্রুপক্ষের ক্ষতিসাধন করে নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়া। এ ধরনের আক্রমণের লক্ষ ছিল শত্রু পক্ষকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা।
শত্রু পক্ষের শক্তিকে এক স্থানে সংহত হতে না দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। নিজেদের ক্ষতি এড়িয়ে হানাদার বাহিনীর ক্ষতি করা। এ যুদ্ধে এ কৌশল খুবই কার্যকর হয়েছিল এবং পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল ভাঙতে শুরু করেছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় অস্ত্রের অভাবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছিলাম না। আমাদের কাছে যুদ্ধাস্ত্র বলতে ছিল থ্রি নট থ্রি, এসএলআর, এসএমজি, হ্যান্ড গ্রেনেড আর এক্সপ্লোসিভ। তাও ছিল অপ্রতুল। অপর পক্ষে পাক হানাদার বাহিনীর ছিল সব ধরনের আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত। বলা চলে শুধু মনের জোরে আমারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি অসম যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী, মোহনপুর, পবা, তানোরসহ এ অঞ্চলের শত্রুপক্ষের বিভিন্ন আস্তানায় আক্রমণ চালাতে গিয়ে আর্মস অ্যামুনেশন শেষ হয়ে যায়। এ সময় আমাদের এফএফ যুদ্ধকালীন কমান্ডার শফিকুর রহমান রাজা আর্মস অ্যামুনেশন আনার জন্য হেড কোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পাওয়া মাত্র হেড কোয়ার্টারে গিয়ে সাব সেক্টর কমান্ডার ৪-এর অধিনায়ক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে রিপোর্ট করার পর প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ দেওয়ার কথা বললাম।
সাবসেক্টর দপ্তরের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ইতিমধ্যে ডিফেন্সের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে সম্মুখ যুদ্ধের পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের কথা শুনে আনন্দে বুকটা ভরে উঠতে লাগল। তখনো সম্মুখ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমার হয়নি।
রণাঙ্গণের সাথী ভাইদের মুখ থেকে সম্মুখযুদ্ধের কথা শুনে ভীষণ মুষড়ে পড়লাম। নিজেকে কাপুরুষ আর অপরাধী মনে হতে লাগল। কারণ অস্ত্র আর যুদ্ধকৌশল সম্পর্কে উন্নত প্রশিক্ষণের অভাবে আমরা সব সময় অনুভব করেছি। আমরা তেমন কিছু করতে পারছিলাম না। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আমি সম্মুখ যুদ্ধে আংশ নেব। যদিও সম্মুখযুদ্ধে ট্রেনিং আমার অল্প ছিল। চার সাব সেক্টরের অধিনায়ক তৎকালীন মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আমার এ অভিপ্রায়ের কথা জানালাম। তিনি আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, ঠিক আছে অপেক্ষা করো। এর কদিন পরেই আমাকে ফরিদপুরের মুক্তাঞ্চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। ফরিদপুর রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানা থেকে সোজা পশ্চিমে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানার (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা) দক্ষিণাঞ্চলের ভারতীয় সীমান্ত এলাকার পদ্মানদীর ধারের একটি মুক্তাঞ্চল। সেখানে আগে থেকেই প্রাক্তন ইপিআর ক্যাম্প ছিল। পরে সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরক্ষা বুহ্য গড়ে তোলে।
আমার হাতে যখন নির্দেশ এসে পৌঁছে তখন বিকেল ৪টা। নির্দেশ পাবার পর কিছুক্ষণের জন্য মনটা মুষড়ে পড়ল আমার। আমি মূল এফএফ দল থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ছি এ জন্য। পরক্ষণে তা কেটে গেল। আমি যেন সম্মুখযুদ্ধের রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগলাম। প্রস্তুতি নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার জন্য নৌকায় গিয়ে উঠলাম। তখন সন্ধ্যে ৬টা বাজে। পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে নৌকা পাড়ে গিয়ে ভিড়ল। মাটিতে পা দিতে না দিতেই বাতাসে তীব্র শীষ দিয়ে ভেসে এলো গুলির আওয়াজ। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করায় ঘাটে অপেক্ষমাণ এক সহযোদ্ধা জানালেন পাকিস্তানি গুপ্তচর ধরা পড়েছে কয়েক দিন আগে। ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। তারই শব্দ। ফরিদপুর ক্যাম্পে যখন পৌঁছালাম তখন রাত ৯টা।
ফরিদপুর ক্যাম্প থেকে কিছু দূরেই মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্স। আমাকে নূর হামীম রিজভীর (বীরপ্রতীক) গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। সেই ডিফেন্স থেকেই পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আক্রমণ ধারা রচনা করেছিলাম। ফরিদপুর ক্যাম্পের সোজাসুজি উত্তরে মাত্র চার মাইল দূরত্বে পাক বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ইসলামপুর ক্যাম্প। হঠাৎ করেই ওপর থেকে নির্দেশ এলো ওই পাক বাহিনীর ক্যাম্প দখলের। দিনটি ছিল ১৬ কিংবা ১৭ নভেম্বর। সম্ভবত ঈদুল ফিতরের দু-একদিন আগে হবে। অনারারি লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান টুনু (বীরপ্রতীক) ভাই তাঁর দলবলসহ উপস্থিত হলেন ডিফেন্সে। ঠিক এমন সময় একজন অপরিচিত লোককে দেখলাম ডিফেন্সের সামনে ঘোরাফেরা করছে। মুখ ভরা তার লম্বা দাড়ি, লম্বা গায়ে জামা, মাথায় টুপি, পায়ে নাগরা জুতা। তাকে দেখে সন্দেহ হলো আমার। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে এলাম ক্যাম্পে। পরে বুঝলাম তিনি আমাদেরই লোক। তিনি আমাদের বিশ্বস্ত ইনফরমার। তাকে পাকবাহিনীর কাছে থাকতে হয় বলেই এই পোশাক।
কিছুক্ষণ পরই সুবেদার মেজর মনোয়ার সাহেব সবাইকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বললেন। যেহেতু ইসলামপুরে পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। তাই তৎকালীন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর অনুপস্থিতে টুনু ভাইয়ের নেতৃত্বে অপারেশনে যাওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। আনুমানিক রাত ১১টার দিকে ইসলামপুর অভিমুখে রওনা দিলাম আমরা। দ্বিমুখী আক্রমণের জন্য ৪০ থেকে ৫০ জনের দলকে দুই ভাগে ভাগ করা হলো। ঠিক হলো সুবেদার মেজর মনোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ রচনা করবে। আর নায়েব সুবেদার হাসেমের নেতৃত্বে আক্রমণ রচনা করবে পশ্চিম দিক থেকে। রাত যখন ঠিক ৪টা তখন আমারা শত্রুর রেঞ্জের মধ্যে পৌঁছে গেছি। আমি এই সম্মুখযুদ্ধে নায়েব সুবেদার হাসেম এবং হাবিল্দার হানিফের প্লাটুনে ছিলাম।
আক্রমণের পূর্বে হানাদার বাহিনীর উপর ভারতীয় সেনাবাহিনী লাগাতার প্রায় এক ঘণ্টা মর্টার আক্রমণ চালাল। ওয়ারলেসে টুনু ভাই ম্যাসেজ দিলেন ‘অ্যাটাক’। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আক্রমণ শুরু হলো। প্রথমে থ্রি ইন্চ মর্টার পরে টু ইন্চ মর্টার আক্রমণ। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো আমাদের অগ্রযাত্রা। সে কি তুমূল লড়াই! গোলাগুলির আওয়াজে প্রকম্পিত হচ্ছে আকাশ-বাতাস। কেঁপে কেঁপে উঠছে মাটি। আমাদের মাথার উপর দিয়ে শত্রুপক্ষের ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ট-র-র-র,-ট-র, ট-র-র, শব্দে ছুটে যাচ্ছে অবিরাম। কখনো কখনো আমাদের মাঝে এসে পড়ছে শত্রুর গোলা। তবুও অসীম সাহসে এগিয়ে চলেছি শত্রু ব্যুহের দিকে। আমরা তখন শত্রুর পাকা বাঙ্কারের কাছাকাছি এসে গেছি। বড় জোর মাত্র হাজার গজ দূরত্ব পেরুতে পারলেই কেল্লা ফতে। তারপর হাতাহাতি নয়তো হ্যান্ডস আপ। তারপর বিজয়োল্লাস। শত্রুপক্ষ প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আমাদের দ্বিমুখী আক্রমণে। তখন সকাল ৮টা অথবা ৯টা বাজে। ততক্ষণে বিজয়ের সম্ভবনায় আমাদের মনোবল বেড়ে গেছে বহুগুণ। আমরা এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। ঠিক সে সময় আচমকা মেশিনগান চার্জ করে বসে হানাদার বাহিনী। আমরা হকচকিয়ে গেলাম। ইনফরমেশন অনুযায়ী শত্রুপক্ষের কাছে ভারি মেশিনগান থাকার কথা নয়। কিন্তু ঘটল তার বিপরীত। থেমে গেল আমাদের অগ্রযাত্রা। ম্যাসেজ দিলেন টুনু ভাই স্টপ অ্যান্ড উইথড্রো।
বুঝতে দেরি হলো না কিছু একটা ঘটেছে। তবুও বিজয়ের দোরগোড়ায় এসে উইথড্রোর ম্যাসেজে মনটা খারাপ হয়ে গেল। নির্দেশ পেয়ে অসন্তুষ্ট মনে পিছু হটতে শুরু করলাম। শত্রুপক্ষের আচমকা ভারি মেশিনগান চার্জের ফলে আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে আমি তখনো জানি না। কিছুক্ষণের মধ্যে মোটামুটি নিরাপদ দূরত্বে পিছিয়ে এলাম আমরা। সামনে একটা গ্রাম। গ্রামে ঢুকে পড়লাম সবাই। গ্রামবাসী খবর দিলেন কয়েক জন রাজাকার আত্মগোপন করে আছে এই গ্রামে। কয়েকটি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ১৩ জন রাজাকারকে অস্ত্রসহ আটক করা হলো। এ গ্রামে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে ঠিক হলো। এমন সময় নির্দেশ দেওয়া হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। শুনলাম ইনফরমেশন এসেছে নবাবগঞ্জ থেকে বহুসংখ্যক পাকসেনা ইসলামপুরে এসে একত্রিত হয়েছে এবং পাল্টা আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসছে। আমরা রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে গ্রাম থেকে বেরিয়ে এলাম। এমন সময় মেশিনগানের গুলি আমাদের ওপর দিয়ে সাঁ সাঁ শব্দ করে বেরিয়ে গেল। আমরাও শত্রুপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য পিছ ফিরে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পশ্চাৎবর্তী গ্রামে এসে পৌঁছলাম। অপর দলটিও কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে আমাদের সাথে একত্রিত হলো।
তারা সঙ্গে করে এনেছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের লাশ। আমি এসে জানতে পারলাম আটজন মুক্তিযোদ্ধা এই যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ ছাড়া অন্যদের লাশ আনা সম্ভব হয়নি। হাবিলদার আবুল কাশেমের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল গ্রামবাসী। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। আমরাও কাঁদছি। গ্রামবাসীও কাঁদছে। সাধারণ মানুষের মনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গভীর মমত্ববোধের কথা এই প্রথম উপলব্ধি করলাম আমি। প্রিয় সাথী ভাইদের হারানোর বিষণ্ণতার মাঝেও মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে প্রতিশোধের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ছাপ ফুটে উঠতে লাগল।
এই যুদ্ধে হাবিলদার আবুল কাশেম, হাবিলদার মোহর, নিজাম, জিল্লুর, গোলাম মোস্তফাসহ এই যুদ্ধে আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ সংবাদে আমি এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়লাম যে সুবেদার মেজর মনোয়ারকে চার্জ করে বসলাম-এতগুলো সঙ্গীর লাশ ফেলে রেখে আমরা কাপুরুষের মতো উইথড্রো করলাম? সম্ভবত আমার আবেগের গভীরতা উপলব্ধি করতে পেরে বললেন, ভাই রে সেটাই তো আমার বড় দুঃখ। আমরা জানতাম শত্রুর হাতে কোনো মেশিনগান নেই। আচমকা মেশিনগান চার্জ হওয়ার ফলে আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলাম।
যখন আমাদের ট্রুপস শত্রুর বাংকারের একবারের কাছে চলে এসেছে। জায়গাটা ছিল সমতল। কিন্তু আমাদের যোদ্ধারা চেয়েছিল শত্রুপক্ষের বাংকারের মধ্যে তাদের জীবন্ত ধরতে। হঠাৎ শত্রুর মেশিনগান গর্জে উঠল। একই সাথে বুলেটবিদ্ধ হলেন আমাদের আটজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা তাঁদের লাশ উদ্ধার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শত্রুদের অবিরাম গুলিবর্ষণের মুখে তা সম্ভব ছিল না। আমরা পিছু হটতে বাধ্য হলাম। নিজাম তখনো মারা যায়নি। তার বুকে গুলি লেগেছিল। সে হামাগুড়ি দিয়ে আমাদের পিছু পিছু সরে আসছিল। তাকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছিল সে। তার আকুতি শুনে আমরা অনেকেই থেমে যাই। বিরামহীন গোলাগুলির মধ্যে একপর্যায়ে নিজাম আমাদের কাছে আসার যথেষ্ট চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আমাদের সঙ্গে তার দূরত্ব প্রায় ১০০ গজের বেশি। তার কাতরানি আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম। একবার সে বলে উঠল, ‘ভাই আপনারা এগিয়ে যান। আমার আর কোনো আশা নাই। আপনারা এগিযে যান। তখন বৃষ্টির মতো গুলি হচ্ছিল। বাধ্য হয়েই আহত নিজামকে পিছনে ফেলে রেখেই আমরা পিছিয়ে এলাম। সম্ভবত দাঁড়ানোর সময় তাকে আবার গুলি করা হয়েছিল। সুবেদার মনোয়ারের ভাষ্য অনুযায়ী পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার ধারণা হলো। ক্ষোভ দূর হলো। কিন্তু স্বজনহারা বিয়োগ-ব্যথায় মুষড়ে গেলাম আমরা সবাই। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্ত মাড়িয়ে অর্জিত হলো আমার প্রথম সম্মুখ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা। একদিন পর নিজামের করুণ মৃত্যুর খবর শুনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠল প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার মনে। নিজাম তখনো মারা যায়নি। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। ফলে চলবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। আহত নিজাম শত্রুর হাতে ধরা পড়ে। পাক-বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন চালায় আহত নিজামের ওপর। তার চোখ দুটো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে ফেলে। তারপর হত্যা করে বর্বর পাক সেনারা।
লেখক : সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা।