সেই বিউটি হত্যায় বাবা-চাচা জড়িত!
গভীর রাতে শরীরে ছুরি চালিয়ে নিজের মেয়ে বিউট আক্তারকে যখন খুন করে ভাড়াটে খুনিরা, তখন দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখেন জন্মদাতা বাবা সায়েদ আলী। রাস্তার খালের পাশে হত্যার পর মেয়েটির লাশ ফেলে রাখা হয় হাওরের শুকনো জমিতে।
এভাবেই মেয়েকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সায়েদ আলী। আর এই হত্যায় উসকানি দেন সায়েদ আলীর চাচাতো ভাই ভাই ময়না মিয়া। উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ‘ধর্ষক’ বাবুল মিয়ার মায়ের কাছে স্ত্রীর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এবং বাবুল ও তাঁর পরিবারকে ফাঁসাতে এই উসকানি দেন ময়না মিয়া। ময়না মিয়া ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় মেয়ে বিউটি আক্তারকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তার বাবা সায়েদ আলী (বাঁয়ে) ও চাচা ময়না মিয়া। ছবি : সংগৃহীত
দুই ভাই এসব কথা স্বীকার করে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে সায়েদ আলী আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জবানবন্দি দেন। শুক্রবার রাতে জবানবন্দি দেন ময়না মিয়া। ওই দিন বিকেলে জবানবন্দি দেন বাবুল মিয়া। তিনি বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।
বিউটি আক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে জবানবন্দির এসব বর্ণনা তুলে ধরেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। আজ বিকেল ৬টায় পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে তিনি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন।
পুলিশ সুপার জানান, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান বাবুল মিয়া ও তাঁর লোকজন। তাকে অপহরণ করে প্রায় এক মাস বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন বাবুল। এ ঘটনায় বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন বিউটির বাবা সায়েদ আলী। মামলায় সাক্ষী করা হয় বিউটির চাচা ময়না মিয়াকে।
অপরদিকে, গত ইউপি নির্বাচনে বাবুল মিয়ার মা কলম চান সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রার্থী হন। তিনি ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা আক্তারকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। এ নিয়ে বাবুল মিয়া ও ময়না মিয়ার মধ্যে বিরোধ চলছিল। এদিকে, বিউটি আক্তার ধর্ষণের শিকার হওয়ায় বাবুল মিয়া ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের সুযোগ নেন ময়না মিয়া।
পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা জানান, ময়না মিয়া বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে বুঝান, তোমার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে কলঙ্কিনী হয়ে গেছে। এই মেয়ে রেখে লাভ কি। তোমার মেয়েকে খুন করে ধর্ষক বাবুলের ওপর খুনের দায় চাপিয়ে দিলে তার উপযুক্ত শাস্তি হবে। ময়না মিয়ার কথায় সায় দেন সায়েদ আলী। কথা মতো ১৬ মার্চ রাত ১২টার দিকে সায়েদ আলী লাখাই উপজেলার গুনিপুর গ্রামে গিয়ে বিউটি আক্তারকে তার নানা বাড়ি থেকে এনে তুলে দেন ময়না মিয়ার হাতে। রাত ৩টার দিকে ময়না মিয়া ও এক ভাড়াটে খুনি মিলে বিউটি আক্তারকে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় হাওরে এনে খুন করে। খুনের সময় কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা সায়েদ আলী।
আসামি গ্রেপ্তারের স্বার্থে ভাড়াটে খুনির নাম প্রকাশ করেননি পুলিশ সুপার।
প্রসঙ্গত, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বিউটি আক্তার প্রথমে অপহরণ হয়। পরে ফিরে এলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নানাবাড়িতে। সেখান থেকে ১৬ মার্চ সে নিখোঁজ হয়। ১৭ মার্চ হাওরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।