‘বিদ্যুতে জীবনে বাড়াব মান, না হারিয়ে হাজারো প্রাণ’
টেংরাগিরি বনাঞ্চল, যাকে স্থানীয়ভাবে ফাতরার বন বলা হয়, এমন একটি বন যা বরগুনার তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত। গত কয়েক বছর ধরে বনটি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একে একে মরছে বনটির বিলুপ্তপ্রায় অনেক গাছ।
তবে এত দিনেও বন বিভাগের পক্ষ থেকে বনটিকে বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই টেংরাগিরি বনের কাছেই এবার কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার ফলে বিলীন হতে পারে এই টেংরাগিরি বনাঞ্চল। ঝুঁকির মুখে পড়বে এই বনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পেশাজীবীরা।
তাই, তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বরগুনা ও ঝালকাঠিতে পৃথক দুটি মানববন্ধন করে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)।
আজ সকালে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে বরগুনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
এ সময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ‘নদী ও বন জীবন রক্ষা করে, তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র জীবন ধ্বংস করে’, ‘বিদ্যুতে জীবনে বাড়াব মান, না হারিয়ে হাজারো প্রাণ’ এর মতো স্লোগান দেখা যায়।
সনাকের বরগুনার সভাপতি আলহাজ আবদুর রব ফকিরের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তারা বলেন, তালতলীতে কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে বিনষ্ট হবে পায়রা ও বিষখালী নদীর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ইলিশের প্রজনন অঞ্চল। এ এলাকার ৯৮ শতাংশ মানুষ কৃষি ও মৎস্যজীবী। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে পেশা হারাবে কয়েক হাজার কৃষি ও মৎস্যজীবীরা।’
কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে আজ ঝালকাঠিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন। ছবি : এনটিভি
বক্তারা আরো বলেন, তালতলীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে হুমকির মুখে পড়বে এখানকার পরিবেশ। এ ছাড়া মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ট্যাংরাগিরি বনাঞ্চল, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সংরক্ষিত এই বন।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা পরিবেশ আইনে নিষিদ্ধ থাকায় এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন কামাল, জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর হোসেন হাওলাদার, জেলা পরিবেশ আন্দোলন কমিটির সভাপতি শুখরঞ্জন শীল, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক আরিফ, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বরগুনার সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল।
এর আগে গতকাল সোমবার সকালে তালতলীর নিশানবাড়িয়া এলাকায় প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে মানববন্ধন করে কয়েকহাজার স্থানীয় অধিবাসী।
এদিকে, কোনো ধরনের পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই টেংরাগিরি সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলের পাশে কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ঝালকাঠিতে মানববন্ধন করে সনাক। আজ সকালে ঝালকাঠি সনাকের উদ্যোগে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। সনাকের জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মো. লাল মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহসভাপতি হেমায়েত উদ্দিন হিমু, ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী খলিলুর রহমান, টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার মো. রোকনুজ্জামান, ইয়েস দলনেতা উম্মে আয়মান জ্যোতি, সহদল নেতা আনন্দ চক্রবর্তী, সদস্য আমিনুল ইসলাম ও রাফিউল ইসলাম।
মানববন্ধনে বক্তারা, সংবিধান এবং আইন লঙ্ঘন করে এ ধরনের প্রাণ ও প্রতিবেশ বিধ্বংসী কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান।