এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি জীবাণু বা ভাইরাসজনিত রোগ। শীতকালে এবং ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময়টায় কমবেশি অনেকেই জ্বর এবং সর্দিকাশিতে ভোগেন। তাই এ রোগের উপসর্গ এবং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো জেনে রাখা জরুরি।
উপসর্গ
ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে আপনার জ্বর হতে পারে। সেই সাথে গা-হাত-পা ব্যথা, সর্দিকাশি, নাক দিয়ে পানি ঝরা, হাঁচি, কিছুটা মাথা ধরা- এগুলোও হতে পারে পাশাপাশি। বমি বমি ভাবও হতে পারে, তবে সেটা ক্ষেত্রবিশেষে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বরের পরিমাণ ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রির মধ্যে হয়। এ রোগে তেমন একটা শ্বাসকষ্ট হয় না। তবে অবস্থা জটিল হলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এই সময় অবসাদ, বিষণ্ণতা ভর করতে পারে শরীর ও মনে।
এ রোগের চিকিৎসা
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অসুখ তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এ ধরনের রোগে উপসর্গ সাপেক্ষে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন : জ্বর যদি ১০১ ডিগ্রির বেশি হয় সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সিরাপ দেওয়া হয়। বেশি হলে মলদ্বার দিয়ে সাপোজিটরি দিতে বলা হয়। সর্দিকাশির জন্য অ্যান্টি-হিসটামিন জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ করে। বিশেষ ক্ষেত্রে নাজল ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।এ ছাড়া অনেক সময় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয়। তবে কোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না।
এ ছাড়া ভেষজ চিকিৎসায় তুলসি পাতার রস, আদার রস, লেবুর রস, মধু, আনারস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এসব ভেষজ জিনিস এই রোগ সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। তবে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীকে ক্ষেত্রবিশেষে হাসপাতালেও নিতে হতে পারে। যেমন বয়স্ক রোগীর ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত জ্বর থাকলে, বেশি শ্বাসকষ্ট হলে, অসহনীয় মাথা ব্যথা, বারবার বমি হলে কিংবা শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
প্রতিরোধ
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি সংক্রামক রোগ। এটি মূলত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। যেমন : হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাকমুখ ঢাকতে হবে, যাতে থুতু বা শ্লেষ্মাকণা বাতাসে ছিটে না যায়। এতে অন্য কারো সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে।
যদি রুমাল বা টিস্যু পেপার হাতের কাছে না থাকে তাহলে অন্তত হাত দিয়ে নাক মুখ চাপা দিতে হবে। পরে হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এগুলো মেনে চললে রোগ সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে।এ সময় রোগীকে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, একইসাথে খেতে হবে পানিজাতীয় খাবার। এ রোগে বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারলে ভালো হয়। বিশেষ করে শিশু এবং প্রবীণদের কাছ থেকে আক্রান্তদের দূরে থাকতে হবে। কেননা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কম থাকে। তাই ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলে ইনফ্লুয়েঞ্জাকে প্রতিরোধ করুন।
লেখক : ডা. মুহাম্মদ হাসান আন্দালীব, দুর্ঘটনা ও ইমার্জেন্সি বিশেষজ্ঞ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।