সিক্রেট সার্ভিসের ১২টি অজানা তথ্য
সিক্রেট সার্ভিস নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে জেমস বন্ড বা মিশন ইম্পসিবল ছবির ইথান হান্টের মতো কোনো এক দুর্ধর্ষ এজেন্টের ছবি, যে চোখের নিমেষেই হারিয়ে দিতে পারে তাঁর প্রতিপক্ষকে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, অসাধারণ সব কৌশল ও দুর্দান্ত সব অ্যাকশন—সবকিছু মিলিয়েই সিক্রেট সার্ভিস যেন স্বপ্নের এক চরিত্র। তবে হলিউডের বিভিন্ন চলচ্চিত্র, ধারাবাহিকগুলোতে সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয় আসলে তাঁরা সে রকমটি নন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রেও অনেকখানি মিলেও যায় তাঁদের সঙ্গে। তাই হলিউড ছবির অপেক্ষায় না থেকে চলুন ব্রাইট সাইটের সৌজন্যে এক নজরে জেনে নিই সিক্রেট সার্ভিসের বারোটি অজানা তথ্য।
১. আব্রাহাম লিংকনের মৃত্যুর দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় সিক্রেট সার্ভিস
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সচিব হিউ ম্যাককুলোকের মাথা থেকে বের হয় সিক্রেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। আব্রাহাম লিংকন মারা যান ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে। সেদিন দুপুরেই সিক্রেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা লিংকনের কাছে বর্ণনা করেন হগ। তাঁর পরের দিন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সিক্রেট সার্ভিস। তবে সিক্রেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ জালিয়াতদের পাকড়াও করা। কিন্তু আব্রাহাম লিংকনের মৃত্যু বদলে দেয় সিক্রেট সার্ভিসের মূল উদ্দেশ্য।
২. চ্যালেঞ্জিং প্রশিক্ষণ
সিক্রেট সার্ভিসের একজন এজেন্টকে একাই ১০ জনের সমান হয়ে উঠতে হয়। তাই পৃথিবীর অন্য যেকোনো বাহিনী থেকে আলাদা ও কঠিন প্রশিক্ষণের মুখোমুখি হতে হয় প্রত্যেক সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টকে। তাঁদের ছুড়ে ফেলা হয় তীব্র স্রোতের জলে অথবা মুখোমুখি করা হয় ভয়াবহ কোনো বন্দুকযুদ্ধের। যেখানে বেঁচে থাকতে হলে অপরকে হত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে প্রশিক্ষণ অবস্থায় তাঁদের করা গুলিতে মারা যায় না কেউই। বিশেষভাবে তৈরি করা বুলেট দিয়ে এই প্রশিক্ষণ পর্বটি সম্পন্ন করা হয়। এ ছাড়া চিকিৎসাবিদ্যাও শেখানো হয় সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে আহত কাউকে ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারার দক্ষতা রয়েছে সব সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টের। এমনকি তাঁরা রাষ্ট্রপতির কোথাও যাওয়ার রাস্তা এমনভাবে নির্বাচন করেন, যাতে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতাল যেতে ১০ মিনিট সময় লাগে।
৩. কর্মজীবন শেষ হয় তিনটি ধাপে
সিক্রেট সার্ভিসে ঢুকেই ফিল্ড এজেন্ট হিসেবে নাম লেখাতে পারবেন না আপনি। প্রথমে আপনাকে তিন বছরের জন্য অফিসে বসেই বেশ কিছু চ্যালেঞ্জিং কাজের মুখোমুখি হতে হবে। এরপর নির্বাচিতদের নামানো হবে মাঠ পর্যায়ের মিশনে। প্রায় চার থেকে সাত বছর ফিল্ড এজেন্ট হিসেবে কাজ শেষে আবারও সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টকে ফিরতে হবে অফিসে। অবসর পর্যন্ত অফিসেই পার করতে হয় বাকি জীবন।
৪. সিক্রেট সার্ভিসের সদস্য সংখ্যা আমাদের ভাবনার চেয়েও বেশি
হলিউড ছবি দেখে আমাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্য সংখ্যা বুঝি খুবই কম। হয়তো বা ১০০ জনের বেশি হবে না। তবে আমাদের ধারণা ভুল। কোনো কোনো দেশের সিক্রেট সার্ভিসের সদস্য সংখ্যা হাজারের ওপরে।
৫. নিজেদের সদর দপ্তর গোপন রাখেন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা
সিক্রেট সার্ভিসের সদর দপ্তরের ঠিকানা জানা নেই কোনো সাধারণ মানুষের। আর সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরাও গোপন রাখেন তাঁদের সদর দপ্তরের ঠিকানা।
৬. সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা বাইরে কখনই রোদচশমা পরেন না
হলিউডের বিভিন্ন ছবিতে কালো রঙের পোশাক ও কালো রঙের রোদচশমায় চোখ ঢাকা থাকে সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের। তবে আদতে তা নয়। ছবির মতো কালো রঙের পোশাক পরলেও বাইরে কালো রঙের রোদচশমা কখনই চোখে দেন না তাঁরা। এর পেছনে রয়েছে নির্দিষ্ট কারণ। তাঁরা চান না, গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিশনে আলোর স্বল্পতার কারণে কোনো কিছু বাদ পড়ে যাক।
৭. তাঁরা সব সময় তৈরি থাকেন
সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সব সময় তৈরি থাকেন। হাত ও আঙুলের অবস্থান আলাদা হলেও তাঁদের হাত সব সময় ভাঁজ অবস্থায় বুকের কাছাকাছি থাকে। এতে দ্রুত বুকের কাছে ঝুলিয়ে রাখা অস্ত্র বের করা যায়।
৮. তাঁরা শুধু প্রেসিডেন্টকেই সুরক্ষা দেন না
যদি ধারণা করেন যে শুধু প্রেসিডেন্টকেই সুরক্ষা দেন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা, তাহলে সে ধারণা ভুল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবার, সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্টের অতিথি সবাইকেই সুরক্ষা প্রদান করেন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা। এমনকি প্রেসিডেন্ট যাকে চান, তাঁকে সুরক্ষা দিতেও বাধ্য থাকেন তাঁরা।
৯. প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষ নাম
প্রতিটি প্রেসিডেন্টের জন্য আলাদা কোডনেম বা বিশেষ নাম ব্যবহার করেন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যেমন বারাক ওবামার কোডনেম ছিল রেনেগেড, তাঁর স্ত্রী ফার্স্ট লেডির নাম ছিল রেনিয়াইসেন্স, দুই মেয়ের নাম ছিল রেডিয়েন্স ও রোজবাড।
১০. অংশ নেন প্রেসিডেন্টের সব ধরনের শখ পূরণে
প্রেসিডেন্টের পাশে ছায়ার মতো লেগে থাকেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। এমনকি তাঁদের অংশ নিতে দেখা যায় প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন শখ পূরণেও। যেমন জগিং, পাহাড়ে চড়া সবকিছুতেই পাশে থাকেন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা। এমনকি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার সময় পাশে থাকেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা।
১১. প্রেসিডেন্টের জন্য প্রাণ দেওয়ার অঙ্গীকার তাঁরা করেন না
বিভিন্ন হলিউড ছবিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্টের জন্য মারা যেতেও প্রস্তুত থাকেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। তবে আসলে তা নয়। সিক্রেট সার্ভিসের ইতিহাসে মাত্র একজন এজেন্টই মারা গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টকে বাঁচাতে গিয়ে। ১৯৫০ সালের ১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানকে বাঁচাতে গিয়ে মারা যান লেসলি কোফেল্ট।
১২. মাঝেমধ্যে তাঁরা ব্যর্থও হন
সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা যথেষ্ট চৌকস হলেও তাঁরাও মানুষ। মাঝেমধ্যে তাঁদেরও ভুল হয়, ব্যর্থ হন। একবার বারাক ওবামা লিফটে ওঠার সময় তাঁকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে বসেন এক যুবক। সবচেয়ে বড় কথা, সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হোয়াইট হাউসের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকেন সে যুবক।