যাদের জন্য রাজনীতি, তাদের ওপরই কেন আঘাত : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন মানুষের জন্য। অথচ এখন সেই সাধারণ মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। যাদের জন্য রাজনীতি, তাদের ওপরই আঘাত করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে চলমান হরতাল-অবরোধে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীতে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য দেওয়ার বেশির ভাগ সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে কথা বলেন।
এ সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরাও আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি; রাজনীতি করেছি। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তাকে কোন সংজ্ঞায় রাজনীতি বলবেন?’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘যতটুকু যা প্রয়োজন, আমরা করেছি। অনেক সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন, সাহায্য করেছেন। কিন্তু এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ড আর এই বীভৎস হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা চাই।’
এ সময় কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এ কী বীভৎসতা! আমি আসলে... আমার কোনো বক্তব্য আসছে না। আজকে যারা স্বজন হারিয়েছে, তাদের বেদনা আমি বুঝি। এই যে পোড়া অবস্থায় একেকটা মানুষ তারা যে বেঁচে থাকবে, এ তো মৃত্যুযন্ত্রণার থেকেও ভয়াবহভাবে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, এই যন্ত্রণা তো সহসা যাবে না। সারা জীবন এই দগ্ধ শরীর নিয়ে তাদের ধুঁকে ধুঁকে বাঁচতে হবে। কেন মানুষকে এই কষ্টের দিকে ঠেলে দেওয়া? কেন মানুষের জীবন নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলা? হারানোর বেদনা আমি জানি। সেই কষ্ট নিয়েই বেঁচে আছি।’
এ সময় আবেগে গলা ধরে আসে শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, ‘নিরীহ মানুষের ওপর কেন এই অত্যাচার? ২১ আগস্ট আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হামলা করেছে।...বহু নেতা-কর্মী আমরা হারিয়েছি। এখন দেখছি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী তো বটেই, সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। আমি সকলের কাছে এই আহ্বান করব, অন্তত বিএনপি নেত্রীকে বলেন যে মানুষ খুন করা বা মানুষের লাশ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করুক।’
বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে এই প্রতিবন্ধকতা কার স্বার্থে সৃষ্টি করা হচ্ছে? এ পরিস্থিতি কোনো রক্ত-মাংসের মানুষ সহ্য করতে পারবে না। মানুষের জানমাল বাঁচানোর জন্য যা করা দরকার, আমরা করব।’
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব দগ্ধ রোগী আছেন, তাঁদের সকলের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন যে ইলেকশন করবেন না। আমি তো চেষ্টা করেছিলাম, আমি টেলিফোন করেছি, কথা বলেছি। মন্ত্রিত্ব সেধেছি। একসাথে যৌথভাবে নির্বাচন করব, সে কথাও বলেছি। উনি কোনো কিছুতেও মানেননি।’
এ সময় আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ফিরে আসার প্রসঙ্গও টানেন শেখ হাসিনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশের সকল মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি, আর একজন হত্যা করছে।’
কাঁদতে কাঁদতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি রাজনীতি নিজের জন্য করি না। কারণ, এই রাজনীতি আমাকে কিছু দেবে না। কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই আমার। সেটা বোধ হয় প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি (রাজনীতি) করি এ দেশের মানুষের জন্য। কারণ, এ দেশের মানুষের জন্য আমার মা, বাবা, ভাই সবাই জীবন দিয়ে গেছে।’
এ দেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দিতেই রাজনীতি করছেন বলে জানান শেখ হাসিনা। বিবেকবান প্রত্যেক মানুষকে এসব দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।