অধ্যক্ষকে ছুরিকাঘাত করলেন ছাত্রলীগের দুই নেতা
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের স্নাতক শ্রেণির এক ছাত্রীর ছবি তোলার প্রতিবাদ করায় অধ্যক্ষকে ছুরিকাঘাত করেছেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এ সময় ওই অধ্যক্ষকে বাঁচাতে গেলে কলেজের অফিস সহকারী ও ওই ছাত্রী আহত হন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অনার্স ভবনের দ্বিতীয় তলার অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
হামলাকারী দুজনের একজনকে আটক করে পুলিশের দেওয়া হয় এবং অন্যজন পালিয়ে যায়। পরে আহত তিনজনকেই হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ (৫৭), অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান (৩৪) ও ওই কলেজ ছাত্রী। অধ্যক্ষ ও অফিস সহকারীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত দুজন হলো মদনপুর গ্রামের দীপন আহমেদ মুন্না ও গন্ধা গ্রামের হুমায়ুন কবির (১৮)। ২০১৬ সালে নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল মুন্না।
হামলার ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় মুন্না ও হুমায়ুনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। পরে সে মামলায় হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ফটকে স্নাতক শ্রেণির এক ছাত্রীর ছবি জোরপূর্বক তোলে মুন্না। তখন সেই ছাত্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদের কাছে অভিযোগ করে। অধ্যক্ষ সঙ্গে সঙ্গে ছবি তোলার ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এতে অধ্যক্ষের ওপর ক্ষিপ্ত হয় মুন্না।
এরই জের ধরে আজ দুপুর ১২টার দিকে নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অনার্স ভবনে অফিস কক্ষে অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদকে অস্ত্র দিয়ে হামলা করেন মুন্না ও হুমায়ুন। অধ্যক্ষকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে হামলাকারীরা। অধ্যক্ষকে বাঁচাতে অফিস সহকারী ও ওই ছাত্রী এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
পরে হামলাকারী মুন্না ও হুমায়ুন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। হুমায়ুনকে আটক করলেও মুন্না মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে আহত অধ্যক্ষ, অফিস সহকারী ও ওই ছাত্রীকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অধ্যক্ষ ও অফিস সহকারীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর কলেজছাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় ওই হাসপাতালে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা নবীগঞ্জ-ইনাতগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে রাস্তার উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজিত চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে যান। পরে আটক হওয়া হুমায়ুনকে পুলিশ হেফাজতে নেন। বিক্ষোভ মিছিলটি কলেজ রোড হয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। এ সময় বক্তরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান হামলাকারী মুন্নাকে গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দেন।
পরে উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা (ইউএনও) তৌহিদ বিন হাসান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউল গনি ওসমানী সেখানে যান। তাঁরা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আতাউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এরই মধ্যে একজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। মূল হামলাকারীকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
এদিকে অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাংসদ এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, সাবেক সাংসদ আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া, নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ ছাবির আহমদ চৌধুরী, নবীগঞ্জ কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক অলিউর রহমান অলিসহ সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।