মানসিক চাপে ছিলেন ইউএস-বাংলার পাইলট : নেপালের প্রতিবেদন
নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নেপাল সরকার। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ফ্লাইট চলাকালীন মানসিক চাপে ছিলেন পাইলট আবিদ সুলতান।
আজ সোমবার নেপালের গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন এবং নেপাল সরকারের তদন্ত অনুযায়ী, আবিদ সুলতান সে সময় ব্যক্তিগত কারণে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন এবং এই কারণে বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেন তিনি, যার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
তদন্তে দাবি করা হয়েছে, সেদিন খুব অস্থির আচরণ করছিলেন পাইলট আবিদ সুলতান, যা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একেবারেই উল্টো।
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজের বিধ্বস্ত হওয়ার সিসিটিভি ফুটেজে ধারণ করা ছবি। ছবি : কাঠমান্ডু পোস্ট
উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণ করার ঠিক ছয় মিনিট আগে আবিদ নিশ্চিত করেছিলেন যে উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ বা আটকানোই আছে। ককপিটে বৈদ্যুতিক নির্দেশক লাইট দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘গিয়ারস ডাউন, থ্রি গ্রিনস।’ কিন্তু যখন আবিদের কো-পাইলট প্রিথুলা রশিদ চূড়ান্তভাবে ল্যান্ডিং চেকলিস্ট পরীক্ষা করছিলেন, দেখলেন গিয়ারগুলো আটকানো নেই। ফলে বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেননি তাঁরা। এর কয়েক মিনিট পরই দ্বিতীয়বার অবতরণের চেষ্টায় ৬৭ জন আরোহী ও চারজন ক্রু নিয়ে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়েছে, ফ্লাইট চলাকালীন আবিদ সুলতান সিগারেট খাচ্ছিলেন। আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক এই পাইলট যিনি ৫৫০০ বার বিমান উড্ডয়ন করেছিলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে জানাননি যে তিনি একজন ধূমপায়ী।
প্রতিবেদনে তদন্তকারীরা লিখেছেন, ‘ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারটি যখন আমরা বিশ্লেষণ করি, এটা খুবই পরিষ্কার ছিল যে ক্যাপ্টেন মানসিক চাপে ভুগছিলেন। ঘুমের অভাবে তাঁকে খুব অবসাদগ্রস্ত এবং ক্লান্তও লাগছিল। বেশ কয়েকবার তিনি কেঁদেছিলেনও।’
ভয়েস রেকর্ডারটিতে প্রায় এক ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ফ্লাইট চলাকালীন কথাবার্তা ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবিদ সুলতান এক পর্যায়ে বলছিলেন, ‘আমি ফ্লাইটের পরোয়া করি না। তুমি তোমার দায়িত্ব নিয়ে থাকো।’ কিন্তু কার উদ্দেশে কথাগুলো তিনি বলছিলেন, এটা বোঝা যায়নি। যেহেতু একমাত্র প্রিথুলা রশিদই ককপিটের অবস্থান করছিলেন। ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে আবিদ সুলতানের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে, তিনি কখনো ধূমপান করেননি।
বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজে আগুন লেগে যায়। ছবি:সংগৃহীত
গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। এতে মোট ৭১ আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাইলটসহ ২৮ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালের এবং একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া বিমানের মাত্র ২০ জন আরোহী বেঁচে ফিরেছিলেন।
এরপর নেপাল ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ভুল নির্দেশনা দেওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। শেষে আজ তারা এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।