রম্য
সিনেমা বনাম বাস্তব
আমরা সিনেমায় যা দেখি, তার সাথে বাস্তবতার অনেক ফারাক। বিস্তারিত জানাচ্ছেন হাস্যরস প্রতিবেদক।
সিনেমায় : কোনো সুন্দরী মেয়েকে ঘিরে হয়রানি করছে বদমায়েশ প্রকৃতির ছেলেরা। ঠিক ওই সময় সুদর্শন চেহারার কোনো যুবক উড়ে এসে বদমায়েশদের শায়েস্তা করে।
বাস্তবে : পথেঘাটে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয় মেয়েরা। কিন্তু সিংহভাগ সময়ই কোনো সুদর্শন-কুদর্শন যুবক মেয়েদের রক্ষার্থে এগিয়ে আসে না।
সিনেমায় : কোনো মেয়েকে (নায়িকা) পছন্দ হলেই দুম করে তাকে ভালোবাসার কথা বলে দেয় নায়ক। সেই মেয়ের ষণ্ডামার্কা বড় ভাই থাকলেও পাত্তা দেয় না নায়ক।
বাস্তবে : কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে তার পেছনে অনেক দিন ঘুরঘুর করেও ভালোবাসার কথা জানাতে পারে না ছেলেরা। আর সেই মেয়ের যদি ষণ্ডামার্কা কোনো ভাই থাকে, তবে তো ১০০ হাত দূরে থাকে ছেলেরা!
সিনেমায় : উচ্চবিত্ত কোনো লোক গাড়ি থেকে নামতেই হাতের ব্রিফকেস ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী। তখন দুঃসাহসিক এক যুবক (নায়ক) এসে ছিনতাইকারীকে ধোলাই দিয়ে ব্রিফকেস উদ্ধার করে।
বাস্তবে : নগরে-বন্দরে অহরহ ছিনতাইয়ের শিকার হয় মানুষ। কিন্তু উদ্ধারকারী কোনো নায়কের দেখা মিলে না!
সিনেমায় : ঠেলাগাড়ি বা রিকশা চালিয়ে, কুলির কাজ করে রাতারাতি ধনী লোক হওয়া যায়!
বাস্তবে : রাতদিন পরিশ্রম করে, কলুর বলদের মতো খেটেও সিংহভাগ মানুষের অবস্থার উন্নতি হয় না।
সিনেমায় : নায়িকাকে বিয়ে করার যোগ্যতা হিসেবে তার বাবার ‘৩০ দিনে কোটিপতি হওয়ার’ বেসম্ভব শর্তও মেনে নেয় নায়ক। শুধু মেনে নেওয়াই নয়, শর্ত পূরণ করেই দেখায় নায়ক!
বাস্তবে : প্রেমিকাকে বিয়ে করতে যোগ্যতা হিসেবে তার বাবার ‘একটা চাকরি জোগাড় করো’ শর্তই অনেক প্রেমিকের জন্য আকাশকুসুম কল্পনা হয়ে দাঁড়ায়!
সিনেমায় : নায়ক বা নায়িকা বিপদের মুখে পড়লে তার বন্ধুরা জানপ্রাণ সঁপে পাশে দাঁড়ায়।
বাস্তবে : কারো বিপদ এলে সবার আগে কাছের মানুষই দূরে সরে থাকে! তখন কাছের মানুষদের ব্যস্ততাও অসম্ভব রকম বেড়ে যায়!
সিনেমায় : গুণ্ডাদের গুলিবৃষ্টির মধ্যেও নায়কের গায়ে একটা গুলিও লাগে না! লাগলেও তিনি বেঁচে যান এবং ডাক্তার বলেন, ‘হি ইজ অলরাইট নাও!’
বাস্তবে : কোথাও গোলাগুলি হলেই লাশ পড়ে! একটা গুলি শরীরে লাগলেই ধরনীকে বিদায় জানায় মানুষ।
সিনেমায় : সব চিকিৎসা বিফল করে ওপারে চলে যাওয়া নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে নায়ক চিৎকার করে কাঁদলে সে চোখ মেলে তাকায়!
বাস্তবে : ছোটখাটো রোগব্যধিতেও হুটহাট মরে যায় মানুষ! শত কান্নায়ও কেউ আর চোখ খোলে তাকায় না।
সিনেমায় : ধনী ও গুণ্ডা প্রকৃতির ব্যক্তিকে সহজেই ঘোল খাইয়ে ছাড়ে গরিব নায়ক।
বাস্তবে : একটু টাকাপয়সাওয়ালা কোনো ব্যক্তির সাথে বিবাদে জড়ানোর চিন্তাও করে না সাধারণ মানুষ।
সিনেমায় : নায়ককে কয়েকজন গুণ্ডা মিলে পিটুনি দিলেও তার কিচ্ছু হয় না! কিন্তু নায়কের একেক ঘুষিতে গুণ্ডারা সব উড়ে উড়ে দূরে গিয়ে পড়ে কাতরায়!
বাস্তবে : ঘুষি দূরে থাক, চুপচাপ মার খেয়ে বাসায় ফিরে আসে ভদ্রলোক!
সিনেমায় : প্রেমের টানে নায়িকা পরিবারের সবাইকে ছেড়ে নায়কের সাথে চলে যায়!
বাস্তবে : প্রেম যতই খাঁটি হোক না কেন, পরিবারের অমতে সিংহভাগ মেয়েই প্রেমিকের সাথে যাওয়ার চিন্তাও করে না।
সিনেমায় : ডেটিংয়ের জন্য নায়ক হুটহাট অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অথচ অফিসের বস তাকে খুব বেশি কিছু বলে না।
বাস্তবে : কেউ অফিসের সময়ে হুটহাট বেরিয়ে গেলে পত্র পাঠে তাকে বিদায় বলে দেওয়া হয়।
সিনেমায় : নায়ক বা নায়িকা আঘাত পেয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেললে আরেক আঘাতে স্মৃতিশক্তি ফিরে পায়!
বাস্তবে : কেউ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেললেই হয়েছে! চিকিৎসা করতে করতে সর্বস্ব খুইয়ে ফেললেও খুব কম সময়ই স্মৃতিশক্তি ফিরে আসে।
সিনেমায় : পরিচিত গান শুনেই ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে চিনতে পারে আপনজন।
বাস্তবে : কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজতে থানা পুলিশ, পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি, মাইকিং কত কি করা হয়! কিন্তু প্রায় সময়ই হারানো ব্যক্তির খোঁজ মিলে না।
সিনেমায় : পরিবারের কাউকে অপহরণ করে নিয়ে যায় গুণ্ডারা। তখন পরিবারের সাহসী যুবক প্রবল বিক্রমে গুণ্ডাদের আস্তানায় গিয়ে তাদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে।
বাস্তবে : প্রায় সময়ই অপহরণের ঘটনা ঘটে। ভাগ্য ভালো হলে পুলিশের সহায়তায় অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার হয়। অনেক ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হতে হয়। আবার অনেক সময়ই অপহৃত ব্যক্তির কোনো হদিস মিলে না বা মরদেহ পাওয়া যায়।
সিনেমায় : শেষপর্যায়ে সব অপরাধী ধ্বংস হয় বা ধরা পড়ে। বাকিরা সুখে-শান্তিতে বাস করে।
বাস্তবে : অপরাধী দিনকে দিন প্রভাবশালী হয়। ছোটখাটো অপরাধী হঠাৎ ধরা পড়লেও রাঘববোয়াল তথা বড় অপরাধীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সমাজে তাই শান্তিও নিশ্চিত হয় না।