তিস্তা চুক্তিতে সায় দিয়ে মোদিকে মমতার চিঠি
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে সায় দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢাকা সফর থেকে ফিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়ে মমতা তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।ওই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, চুক্তি নিয়ে জট কাটাতে তিনি সহযোগিতা করতে চান।
এ নিয়ে আজ বুধবার কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়। ‘তিস্তাজট কাটাতে চেয়ে মোদিকে চিঠি মমতার’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ফিরে মমতা সফরের খুঁটিনাটি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁর সফর ইতিবাচক হয়েছে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি যে আশ্বাস দিয়েছেন, সে কথাও প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে ভোলেননি মমতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, জলের ভাগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে। এবং এই চুক্তি নিয়ে যে জট পাকিয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমেই কাটিয়ে ফেলা সম্ভব। এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছেন মমতা। সরকারি সূত্রের খবরে আনন্দবাজার জানিয়েছে, চলতি মাসের ৯ তারিখ মোদি-মমতা বৈঠকে তিস্তা চুক্তি ও বাংলাদেশ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো উঠবে।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, মমতা এ বছরেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে সবুজসংকেত দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু রাজ্য বঞ্চিত হবে এই যুক্তিতে এতদিন মমতা যে তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন, কোন যুক্তি তুলে আবার সেটিকে মেনে নেবেন, তা নিয়ে কৌতূহলী সবাই।
সূত্রের কথা উল্লেখ করে পত্রিকাটি আরো জানায়, মমতা শেখ হাসিনাকে বলেছেন তিনি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নন। কিন্তু কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় রাজ্যের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে কেন্দ্র যেভাবে চুক্তিটি করতে চলেছিল, তাতে এ বাংলার উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। কেন্দ্রের সচিবরা অনেক বুঝিয়েও তাঁকে এ বিষয়ে নরম করতে পারেননি। বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি তাঁকে বোঝাতে কলকাতায় এলে তাঁর সঙ্গে মমতার কথাকাটাকাটি হয়। এর ফলে তিস্তা চুক্তিও বিশ বাঁও জলে চলে যায়।
আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে আরো জানিয়েছে, সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই ঢাকা সফরে যেতে চান নরেন্দ্র মোদি। পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের হাত দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মোদি। সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সফরের জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন। মোদি হাসিনাকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই ঢাকায় যেতে চান তিনি।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি করার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে সঙ্গে রেখেছিলেন, তিস্তা চুক্তিতেও মমতাকে ঠিক একইভাবে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাচ্ছেন মোদি। এই নীতি মেনেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়াতেও তিনি তামিলনাড়ুকে সঙ্গে রাখছেন।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, আজ বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিস্তা নিয়ে এখনো মোদি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকটি বিষয় নিয়ে ফোন করেছিলেন আমাকে। রাজনীতি নিয়ে বিরোধিতা থাকলেও সরকার চালাতে গেলে সরকারি বিষয়ে সেসব আসে না। নানা বিষয়ে আমরা তাঁদের জানাই। তাঁরাও নিয়মিত আমাদের নানা বিষয়ে জানান। তাই বাংলাদেশ সফর নিয়ে আমি আমার অভিজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’