গাড়ি বেচতে সুগন্ধি!
কী দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন গাড়ির সওদাগররা? অভিজাত আউটলুক, নরম চামড়া মোড়ানো স্টিয়ারিং হুইল, আয়েশি গদির আরামদায়ক আসন, মৃদু শব্দে বন্ধ হয়ে যাওয়া দরজা, এই তো! তবে ক্রেতাদের মন ভোলাতে এখন বায়বীয় মাধ্যমে মন দিয়েছেন নির্মাতারা। মোহনীয় সুবাসও গাড়ির প্রতি ক্রেতাকে সহজে মোহাবিষ্ট করতে পারে। এনডিটিভির খবরে জানা গেল গাড়ির এই সুগন্ধিবৃত্তান্ত!
কেবল সুগন্ধে ভুলিয়ে ক্রেতাকে গাড়ি গছিয়ে দেওয়া অবশ্য সম্ভব নয়। হাজার হোক, ইঞ্জিন থেকে শুরু করে কনফিগারেশন, অনেক বিষয়েই নজর দেবেন ক্রেতারা। তবু ‘প্রথম দেখায় পছন্দ’ ব্যাপারটা তো আসবেই। আর সেখানে এখন যোগ হয়েছে ‘প্রথম সুবাসে পছন্দ’ করার সূত্র!
‘যখন কোনো গাড়ির দিকে নজর দেবেন, তখন ডিজাইন তো অবশ্যই জরুরি বিষয়। কিন্তু যখন গাড়ির ভেতর ঢুকবেন তখন? তার সুবাসটাই কিন্তু প্রথম আপনার অনুভূতিতে নাড়া দেবে!’ মার্সিডিজ বেঞ্জের অন্দরসজ্জাবিষয়ক বিভাগের প্রধান হার্টমুট কোবাক্স এ কারণেই বিশেষ গুরুত্ব দেন সুবাসের বিষয়টিকে।
সুগন্ধের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে মাপছেন নৃতাত্ত্বিক অ্যানিক লো গ্যেরার। গাড়ি এবং সুগন্ধি এ বিষয় নিয়ে আস্ত একটা বইও লিখেছেন তিনি। ‘গন্ধের অনুভূতি মস্তিষ্কের সাথে তীব্রভাবে সংযুক্ত। এটা স্মৃতি আর অনুভূতির সাথেও খুব জড়িয়ে থাকে। আপনার গাড়িতে যদি এমন কোনো মিষ্টি সুবাস থাকে, যা আপনার জীবনের কোনো সুন্দর সময়কে মনে করিয়ে দেয়, আপনার এমনিতেই সে গাড়িতে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করবে।’ এমনই ব্যাখ্যা তাঁর।
অবশ্য এর উল্টো কথাও আছে। গবেষণায় এসেছে, অতি সুগন্ধি অনেক সময় আরোহীর স্বস্তির অনুভূতি কমিয়ে আনে। সে হিসেবে সুগন্ধির ‘ধরন’ কেমন, সেটা গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে হবে। সুগন্ধির বিষয়ে একেবারে উল্টো যুক্তি দিয়েছে বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা রেনল্ট। ‘আমার নীতি হচ্ছে, গাড়িতে যতটা কম সম্ভব সুগন্ধি ব্যবহার করা’, এমনই ভাষ্য এই ফরাসি নির্মাতা সংস্থার।
তবে কড়া গন্ধ নিয়ে আপত্তি থাকলেও মিষ্টি সুবাস নিয়ে সমস্যা নেই নির্মাতাদের। সে হিসেবে তাঁরা এখন গাড়িতে আরোপও করছেন নতুন সুবাসের খেলা। মার্সিডিজের নতুন গাড়িতে এখন সুগন্ধিবিষয়ক ‘অপশন’ থাকবে ক্রেতাদের হাতে।
তবে ক্রেতার নাক পটানো সহজ কাজ নয়! কারণ, অনুভূতিটি ব্যক্তিগত আর কেমন গন্ধে কার মন মজবে, তা তো আগেভাগে বলা যায় না। তাই নির্মাতারা বেশ উঠেপড়ে লাগলেও এ নিয়ে একটু সতর্কভাবে ভাবতে হবে বলে মনে করেন লো গ্যেরার। ‘এমন কোনো চূড়ান্ত মাপকাঠি নেই যা দিয়ে আপনি কোনো সুগন্ধকে আসলে ভালো বা মন্দ বলতে পারবেন।’ এমনই কথা তাঁর।