মংলায় ভবনধসে নিহত ৭, অভিযান শেষ
বাগেরহাটের মংলা বন্দর এলাকায় সেনাকল্যাণ সংস্থার সিমেন্ট কারখানার নির্মাণাধীন চারতলা ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় আজ শুক্রবার সকালে আরো একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ভবনধসের পর এ নিয়ে সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হলো। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। তাঁরা হলেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার আমির আকন্দ ও মারুফ হাওলাদার এবং খুলনা মহানগরীর আল-আমিন।
বাগেরহাটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহিদুর রহমান বলেন, সেনাকল্যাণ সংস্থার মংলা সিমেন্ট কারখানার নির্মাণাধীন চারতলা ভবনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে হঠাৎ ভবনের একাংশের ছাদ ধসে পড়লে তাঁরা চাপা পড়েন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ধসে পড়া ভবন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে ৫৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মংলা বন্দর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত কয়েকজনকে যশোর ও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে আহতদের চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।
আজ সকালে উদ্ধার অভিযান পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক কারখানা এলাকায় নির্মাণাধীন অন্যান্য ভবনের কাজও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও সরকারের তরফ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া নিহত ও আহতদের আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান এই সংসদ সদস্য।
এদিকে, ভবনধসের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর আজ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে সেনাকল্যাণ সংস্থা। প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সেলিম জানান, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় প্রশাসনের কারণে খুব অল্প সময়েই সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এখানে আর কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই কিংবা আর কোনো মৃত মানুষেরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো।
এদিকে, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে আজ শুক্রবার ২০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী প্রিন্স। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আহত পাঁচজনের পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রত্যেক আহত ব্যক্তিকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় মংলা সিমেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানার নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন সৈয়দ হেলাল হোসেন জানান, যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে এবং যাঁরা আহত আছেন, তাঁদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। নিহতদের লাশ মংলা বন্দর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।