আ.লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলকে পুনরায় নির্বাচিত করার জন্য দেশবাসীর কাছে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, যাতে করে পুনরায় আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার দুপুরে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নির্বাচনী জনসভায় এ কথা বলেন। এর আগে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে তারাগঞ্জে পৌঁছেন। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তিনি সড়কপথে তারাগঞ্জ এসে পৌঁছান। এ সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে দলের নেতাকর্মীসহ লাখো জনতা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর পীরগঞ্জে ওই আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, আজকে স্বাধীনতা পেয়েছে। আর নৌকা যখন ক্ষমতায় আসে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই এলাকা তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জসহ সমগ্র বাংলাদেশ তিনি ঘুরে দেখেছেন দরিদ্র মানুষ, মানুষের দুর্দশা এবং হাহাকারের করুণ চিত্র। এইসব এলাকায় ছিল মঙ্গা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে ২০০৮ সালে আর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছে। সে থেকে এ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কোনো মঙ্গা হয়নি। খাবারের কোনো কষ্ট হয়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ফসল উৎপাদন হচ্ছে, খাবারের ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি।’ তিনি এ সময় তাঁর আগামী সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, ‘একটি মানুষও অনাহারে থাকবে না। কারণ গৃহায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। প্রতিটি মানুষ যাতে চিকিৎসা পায়, সে জন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।
তাঁর সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ছেলেমেয়েদের জন্য বই আর মা-বাবাকে কিনতে হয় না, তাঁর সরকার এই দায়িত্ব নিয়েছে। দুই কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে ট্রাস্ট ফান্ড করে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ মায়ের মোবাইল ফোনে মাসের শুরুতে বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বয়স্ক এবং বিধবা-ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা দিচ্ছি, যাতে করে কোনো মা-বোন কোনো ধরনের দুর্গতিতে পড়লে তাঁকে যেন কষ্ট করতে না হয়। এ সময় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, পুল, ব্রিজ, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং যেসব স্থানে বিদ্যুতের লাইন নেই, সেখানে সোলার প্যানেল করে দিয়ে দেশের ৯৩ শতাংশ ঘর আলোকিত করার সরকারের সাফল্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরো রংপুর এলাকা দুর্ভিক্ষপীড়িত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে সেই দুর্দিন চলে গেছে। আজকে সুদিন এসে গেছে। এখন আর মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ নেই। প্রত্যেক মানুষের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান—সবকিছুর ব্যবস্থাই আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাঁর সরকার প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করে দিচ্ছে, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ কাম কালচারাল সেন্টারের আওতায় প্রতিটি উপজেলায় আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে, প্রতিটি এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং উত্তরা ইপিজেডও আমরা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার একটাই লক্ষ্য, আপনারা ভালো থাকবেন, দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবেন, ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখবে, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।’
তিনি এ সময় যুবসমাজের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে মাত্র ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা প্রদানের কথাও উল্লেখ করেন।
তাঁর সরকার ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছে এবং যেখানে তাদের ভর্তুকির টাকাও পৌঁছে যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কৃষকদের কৃষি উপকরণ কার্ড দেওয়া হয়েছে। এ কার্ড দিয়ে স্বল্প মূল্যে তাঁরা কৃষি উপকরণ যাতে কিনতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে সার, বীজ, কটনাশক—প্রতিটি জিনিস সহজলভ্য করা হয়েছে। কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, তার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে। সমবায়ের মাধ্যমেও চাষবাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সুবিধাও কৃষকরা পাচ্ছেন। আর যেন কোনো দিন এ দেশে খাদ্যাভাব বা মঙ্গা না দেখা দেয়, এ জন্য প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে তাঁর সরকার, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘জনগণ বারবার নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই তাঁর সরকারের পক্ষে এসব উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় এই আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে তাঁকে জনগণের হাতে সোপর্দ করেন। তিনি উপস্থিত সকলের কাছে নৌকায় ভোট প্রদানের প্রতিশ্রুতি চাইলে জনগণ দুহাত তুলে তাতে সম্মতি জানায়। তিনি বলেন, ‘আপনারা ডিউককে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন, যাতে করে আমরা আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর নির্বাচনী মহাজোটের উল্লেখ করে যেসব স্থানে মহাজোটের প্রার্থী রয়েছে, সেসব আসনের জনগণকে মহাজোটের প্রার্থীকেও ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।