ফেসবুকের নতুন নির্দেশনা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কিছু পোস্ট মনে হতে পারে সমাজের জন্য ক্ষতির। এমন পোস্ট বন্ধ করতে ফেসবুকের নির্দেশনা আগে থেকেই ছিল। তবে সম্প্রতি কিছু বিষয় যুক্ত করে নতুন করে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকের পোস্ট সরিয়ে ফেলার নতুন নির্দেশনায় কোন ধরনের পোস্ট সরিয়ে ফেলা যাবে - এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোনো পোস্ট সরিয়ে না ফেলার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনায় ‘ভীতিকর সংগঠন’ নামে একটি আলাদা অংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নগ্নতার ব্যাপারেও ফেসবুকের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই নির্দেশনার মাধ্যমে নিজেদের স্বচ্ছতাকে তুলে ধরেছেন।
ফেসবুক জানিয়েছে, ফেসবুকে কোনো পোস্ট সম্পর্কে অভিযোগকারীর কাছে নির্দেশনার একটি অনুলিপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
ফেসবুকের পোস্টবিষয়ক কর্মকর্তা মনিকা বিকেট বলেন, কোনো ব্যবহারকারীর কাছে কোনো পোস্ট ফেসবুকের নির্দেশনার পরিপন্থী মনে হলে তিনি পোস্টটি সরিয়ে ফেলার আবেদন করতে পারেন।
মনিকা বিকেট বিবিসিকে বলেন, কোনো পোস্ট সরিয়ে ফেলার আবেদন ফেসবুকের নির্দেশনার পরিপন্থী কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। নির্দেশনার পরিপন্থী না হলে ব্যবহারকারীকে এর কারণ জানিয়ে আবেদনকারীকে বার্তা পাঠানো হবে।
জঙ্গিবাদ বিষয়ে ফেসবুকের নীতি বিষয়ে মনিকা বিকেট বলেন, এখানে হুমকি দেওয়াকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ফেসবুকে কোনো জঙ্গি সংগঠন বা এর সদস্যদের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন বা এর কোনো নেতার প্রশংসা এবং তাদের কোনো কর্মকাণ্ডের সমর্থন করার সুযোগ নেই। এই বিষয়গুলো আগের নির্দেশনায় বিস্তারিত ছিল না।
নতুন নির্দেশনায় দুই হাজার ৫০০টি শব্দের ব্যাপারে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। এই তালিকা আগের নির্দেশনায় অন্তর্ভুক্ত শব্দের তিনগুণ।
নতুন নির্দেশনায় নগ্নতার ব্যাপারে ফেসবুকের অবস্থানের ব্যাখ্যা বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মতে, পুরো পশ্চাৎদেশ বা নারীর বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন করা যেকোনো ছবিই সরিয়ে ফেলা হবে। ইনস্টাগ্রামের নীতিতে নগ্নতার পর্যায়ে পড়া সব ছবির ব্যাপারেও একই নীতি মেনে চলা হবে।
নির্দেশনায় যুক্ত হয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি বা ভিডিওর ক্ষেত্রেও সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ও কোনো বিষয়ের বিদ্রূপ ছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের কৃত্রিম ছবি বা ভিডিও সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া লেখার মাধ্যমে কোনো রগরগে বর্ণনাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া কোনো উসকানিমূলক বক্তব্যের ব্যাপারেও ফেসবুক সতর্কতা নিয়েছে। আগে থেকেই ফেসবুক কিছু বিষয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে সতর্কতা রেখেছিল। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহারকারীরা এ ক্ষেত্রে বিষয় অন্তর্ভুক্তের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদনে কারণ সঠিকভাবে বর্ণনা করতে হবে।
কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে উল্লাস প্রকাশ করা যাবে না। তবে কোন বিষয়গুলো অপরাধ কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হবে তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।
কেউ হামলার শিকার হতে পারেন এমন কোনো পোস্টের ব্যাপারেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকবে।
ফেসবুকের নতুন নির্দেশনাকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যামিলি অনলাইন সেফটি ইনস্টিটিউশন (ফসি) একে স্বাগত জানালেও সংগঠনটিরই অনেক সদস্য মনে করেন, ফেসবুক এখনো যুবসমাজকে বিপথে নিতে পারে এমন ভিডিও ও ছবি প্রদর্শন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। সংগঠনটির কর্মকর্তা স্টিফেন বলকাম বলেন, ফেসবুকের উচিত কোনো ভিডিওচিত্র বা ছবি প্রদর্শনের আগেই সতর্কবার্তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা। এই ব্যবস্থাটি ফেসবুকের কর্মকর্তারাই করতে পারেন। এ ছাড়া ছবি বা ভিডিও পোস্টকারীর নিজেরও এই সতর্কবার্তা যুক্ত করার সুযোগ থাকতে পারে। কিন্তু এই দুটি ব্যবস্থার কোনোটিই ফেসবুকে নেওয়া হয়নি। বর্তমানে ফেসবুক শুধুমাত্র অভিযোগ পাওয়ার পরই কোনো ছবি বা ভিডিওচিত্রে সতর্কবার্তা প্রদর্শন করে।
ফেসবুক জানিয়েছে, তারা এমন সতর্কবার্তা প্রদর্শনের বিষয় নিয়ে কাজ করছে। ফেসবুক কর্মকর্তা মনিকা বিকেট বলেন, কর্তৃপক্ষ সব সময়ই ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সুযোগ দিতে চায়। তবে এই মুহূর্তে সতর্কবার্তা প্রদর্শনের বিষয়টি ব্যবহারকারীদের হাতে তুলে দিতে ফেসবুক প্রস্তুত নয়।