সীমান্তে জঙ্গি ক্যাম্প, ‘আল্লাহর দলের’ ১৩ জন গ্রেপ্তার
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার রহমানপুর গ্রামে ভারত সীমান্তের কাছে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবারের ওই অভিযানে প্রশিক্ষণের বিভিন্ন উপকরণসহ বিপুল ধর্মীয় বই জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার এ টি এম মুজাহিদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি থেকে বেরিয়ে এসে আল্লাহর দল নামে যে জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে তোলা হয় এরা তারই সদস্য। আল্লাহর দলও নিষিদ্ধ সংগঠন। কিছুদিন আগে ঝালকাঠিতে এদের বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। এদের নেতা মেহেদী গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কুড়িগ্রাম কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ওই গোপন ক্যাম্পে জঙ্গি প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত।
পাটগ্রাম থানার পুলিশ জানায়, পাটগ্রামের রহমানপুর (সিপাইরকামাত) গ্রামে আয়নাল হকের বাড়িতে গোপনে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলার খবর জানতে পেরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশ বাড়ির মালিক ও আল্লাহর দলের পাটগ্রাম উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়নাল হকসহ ১৩ জঙ্গিকে আটক করে। জব্দ করে প্রশিক্ষণের বিভিন্ন উপকরণ ও বিপুল ধর্মীয় বই।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন পাটগ্রাম ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের মাসুদ রানা, ফরহাদ হোসেন, সাফিউল হোসেন, জিয়াউর রহমান ও রোকনুজ্জামান, প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের মোহাম্মদ হাসান, জগতবেড় ইউনিয়নের পশ্চিম জগতবেড় গ্রামের নূর আলম, আলতাফ হোসেন, কচুয়ারপাড় গ্রামের নূর হুদা এবং পাশের হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের দালালপাড়ার আব্দুর রহিম, বড়খাতা ইউনিয়নের বড়খাতা গ্রামের শমসের আলী, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার নান্দিশহর গ্রামের মোহাম্মদ রতন মিয়া।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মাহফুজ আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, পাটগ্রাম উপজেলার রহমানপুর গ্রামে আল্লাহর দলের পাটগ্রাম উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়নাল হকের বাড়িতে গোপনে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। আয়নালের বাড়ি ভারতীয় সীমান্ত ডাঙ্গারবাড়ি থেকে মাত্র ৪০০-৫০০ গজ দূরত্বে। যা তিনবিঘা করিডরেরও পাশে। সেখানে ছোট ছোট উপদলে ভাগ করে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার জঙ্গিদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
পাটগ্রাম থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম জানান, আটক ব্যক্তিরা আল্লাহর দলের সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তারা কে কোন পদে রয়েছে তাও জানা গেছে এবং তাদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে আল্লাহর দলের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার শমসের আলী ও গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মোহাম্মদ রতন মিয়া ওই ক্যাম্পে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে।
এদিকে সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের খবর জানতে পেরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পাটগ্রামে ছুটে যান।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মাহফুজ আলম আরো জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুরো তথ্য জানতে আদালতের কাছে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।