‘ভাইরাল হয়ে নয়, কাজ দিয়ে এত দূর এসেছি’
‘নীলরঙা মন’। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত নতুন ধারাবাহিক নাটক। নাটকটি আগামীকাল ১৪ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহের রবি ও সোমবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হবে। তারকাবহুল নাটকটি লিখেছেন ফারিয়া হোসেন। নাটকটি নির্মাণের গল্প ও অন্যান্য প্রসঙ্গে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন জনপ্রিয় টিভি নাট্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
এনটিভি অনলাইন : বছরে শুরুতেই আপনার পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হতে যাচ্ছে। কেমন লাগছে?
চয়নিকা চৌধুরী : এনটিভিতে এর আগেও আমার সিরিয়াল গেছে। অনেক অপেক্ষার পর এই নাটকটি প্রচার হতে চলেছে। অনুষ্ঠানপ্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ নাটকটি দেখে যা যা সংশোধন করতে বলেছেন আমি করেছি। অবশেষে নাটকটি প্রচার হচ্ছে। অবশ্যই ভালো লাগছে।
এনটিভি অনলাইন : নাটকের গল্প কী ধরনের?
চয়নিকা চৌধুরী : এটা একটা ফ্যামিলি ড্রামা। যৌথ পরিবারের গল্পের নাটক। এই সময়ের চিন্তাধারা এবং অনেক আগের চিন্তাধারার সমন্বয়ে এই নাটক। নীল রংকে কেউ বলে ভালোবাসার আবার কেউ বলে বেদনার। ভালোবাসা ও বেদনা নিয়েই আমাদের মন। তাই নাটকের নাম আমরা দিয়েছি ‘নীলরঙা মন’।
এনটিভি অনলাইন : শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
চয়নিকা চৌধুরী : ভালো ছিল। লেখক ফারিয়া হোসেন অনেক গুছিয়ে চিত্রনাট্য লিখেছেন। তাই শুটিং করতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে একবার এক শিল্পী বড় প্রোজেক্টের কাজ করার জন্য দেশের বাইরে চলে যায় তখন আমরা কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম।
এনটিভি অনলাইন : চয়নিকা চৌধুরীর নাটক মানেই ফারিয়া হোসেনের লেখা। এখন পর্যন্ত ফারিয়া হোসেন আপনার কতগুলো নাটক লিখেছেন? তাঁর সঙ্গে কাজের রসায়ন ভালো হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাই।
চয়নিকা চৌধুরী : আমার পরিচালনায় ১৫০ কিংবা ২০০ নাটক ফারিয়া হোসেনের লেখা হবে। আমার নাটকে কেন ফারিয়া হোসেন এটা বলতে হলে অনেক কিছু বলতে হবে। ফারিয়া হোসেন ছিল আমার হাজবেন্ড অরুণ চৌধুরীর কলিগ। বিয়ের পর আমি পরিচালনা করিনি। শুধু হাউজওয়াইফ ছিলাম। একজন নারী হিসেবে আমি মনে করি হাউজওয়াইফের কাজটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যাহোক ১৯৯৫ সালে আমি লেখালেখির করার চেষ্টা করি। প্রথম একটা নাটক লিখে আমি বিপাশা হায়াতকে পড়তে দেই। বিপাশা সেটা পড়ে বলেছিল ‘অসাধারণ’। আমি আমার হাজবেন্ডকেও পড়তে দিয়েছিলাম কিন্তু সে নাটকটা পড়েনি বরং আমাকে বলেছিল, ‘আমি যদি তোমার একটা নাটক পড়ে দেই তাহলে তুমি নির্ভরশীল হয়ে যাবে।’ সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম কিন্তু এখন আমি তাঁকে ধন্যবাদ দিতে চাই। সে সেদিন নাটকটা দেখেনি বলে আমি আত্মবিশ্বাসী হতে পেয়েছি। পরে নাটকটি মাহফুজ আহমেদের প্রোডাকশন থেকে নির্মাণ করা হয়েছিল। আর আমার সেই প্রথম নাটকের নির্মাতা ফারিয়া হোসেন। অনেক মেধাবী ফারিয়া। একজন নির্মাতা হিসেবে আমি তার ভক্ত। আমি তার কাজ অন্ধের মতো দেখেছি। অনেককিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। এরপর ফারিয়া হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে একেবারে চলে যাওয়ায় আর পরিচালনা করেনি। গত এক যুগ ধরে তার সঙ্গে আমার ফোনে যোগাযোগ হয়। মেইল করে সে নাটক পাঠায়। কাজের প্রতি তার প্রেম আছে তেমনি আমারও। আমরা দুজনই ফাঁকিবাজ না। দুজনই আবেগপ্রবণ। দুজনের চিন্তাধারা কাছাকাছি। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের সম্পর্কের ট্রেন ছুটেই চলেছে।
এনটিভি অনলাইন : এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলি। নির্বাচনী প্রচারণায় আপনাকে এবার দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাই।
চয়নিকা চৌধুরী : ‘আমরা বাংলাদেশের পক্ষে’ নামে প্রায় ৫৮ জন শিল্পীর ভিডিও বার্তা আমরা নিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার কমিটি থেকে এটা করা হয়েছিল। মূলত এটা শমী কায়সারের কাজ ছিল। শমী আমার বন্ধু এবং আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। শমী আমাকে বলেছিল, ‘তুই এই প্রোজেক্টের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পরিচালনা কর।’ প্রচারণার কাজটাও সুন্দর, এবং শমী বলেছে তাই বিশ্বাস, ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে সব শিল্পী কথা বলেছেন। তারিক সুজাত ও পরাগ ভাই স্ক্রিপ্ট করে দিয়েছিল। ভালো কাজ সবাই মিলে করতে হয়। এটা টিম ওয়ার্ক ছিল। দেশের উন্নয়নমূলক স্থানগুলোতে আমরা সবাই গিয়েছিলাম। সব চ্যানেলে ভিডিওগুলো প্রচার হয়েছিল। অনেক আনন্দ নিয়ে কাজটা করেছি। এ ধরনের ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কারণে শমী কায়সারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে আমরা শিল্পীরা গিয়েছিলাম। আমাকে যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শমী কায়সার পরিচয় করিয়ে দেন তখন তাঁকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। শমী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমাদের প্রচারণার ভিডিওগুলো চয়নিকা বানিয়েছে’। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘খুব সুন্দর হয়েছে।’ আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক সাধারণ। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় মনে হয়েছে তিনি মায়ের মতো। মনে হয়েছিল ‘আমার মা কথা বলছে’।
এনটিভি অনলাইন : প্রায় ৩৮২ নাটক এবং ১৭ টা সিরিয়াল আপনি এখন পর্যন্ত বানিয়েছেন। অনেক নির্মাতা অভিনয়ও করেন। আপনাকে কখনো অভিনয়ে দেখা যাবে কি?
চয়নিকা চৌধুরী : অনেকে হয়তো বলে শখের বশে অভিনয় করার ইচ্ছে জাগে। আমি সেটা বলতে চাই না। অভিনয় অনেক কঠিন জিনিস। শিল্পীরা যখন অভিনয় করে তখন আমার হাত পা কাঁপে। ক্যামেরায় সামনে আমি কিছু বলতে গেলে শট এনজি হয় অনেকবার। তবে আমার সুপ্ত একটা ইচ্ছে আছে তা হলো বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়া। সেটা এমন গল্পের হবে যে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে তুলে ধরা হবে।
আর আমার পছন্দের তিনজন পরিচালক আছেন তাঁরা যদি কখনো বলেন, ‘তুমি অভিনয় করবে?’ তাহলে আমি রাজি হতে পারি।
এনটিভি অনলাইন : কারা সেই তিন পরিচালক?
চয়নিকা চৌধুরী : মাহফুজ আহমেদ, গিয়াসউদ্দীন সেলিম এবং অমিতাভ রেজা।
এনটিভি অনলাইন : এ বছর কাজ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
চয়নিকা চৌধুরী : এই বছরে আমার প্রধান টার্গেট একটা চলচ্চিত্র বানানো। অনেকদিন ধরে ছবি বানাতে চাচ্ছিলাম কিন্তু মন মতো গল্প পাচ্ছিলাম না। এত নাটক বানিয়েছি ছবির যা গল্প পেতাম মনে হতো এটা আগেই করেছি। অবশেষে গত বছরের শেষে একটি ভালো গল্প পেয়েছি। চিত্রনাট্য লেখার কাজ চলছে। এটা হবে প্রেমের ছবি। অ্যাকশনও থাকবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো ছবিটি হবে। ছবিতে সব ঋতু দেখাতে চাই আমি। সামনে ঈদের কাজের পরই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে যাব।
আমি ভাইরাল কিংবা ইউটিউবার পরিচালক না। পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষীর লোকজন যাঁরা আছেন তাঁরা হয়তো আমাকে চিনেন না কিন্তু আমার নামটা জানেন। আমি ভাগ্যবান। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা যে আমি ভাইরাল হয়ে নয়, কাজ দিয়ে এত দূর এসেছি। শেষ পর্যন্ত কাজই আসল প্রেম কারণ কাজ কখনো প্রতারণা করে না কিন্তু মানুষ করে। মানুষের মনে কাজ থেকে যায়। আমি কাজ করে যেতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : শেষ প্রশ্ন। আজ আপনার ছেলের জন্মদিন। সময় কেমন কাটছে?
চয়নিকা চৌধুরী : আমার দুই সন্তান অনুলেখা চৌধুরী ও অনন্য প্রতীক চৌধুরী। অনন্যর জন্মদিন উপলক্ষে আমি আজ বাসায় আছি। নিজের হাতে রান্না করছি। সময় ভালো কাটছে। অনন্য সিএ পড়তে অস্ট্রেলিয়ায় জুলাইতে যাবে। অন্যদিকে, অনুলেখা পড়তে যাবে এমবিএ। ওদের ছাড়া কীভাবে থাকব জানি না। এমনও হতে পারে সবকিছু ছেড়ে ওদের কাছে চলে যাব (হাসি)।