অনলাইনে স্বাধীন মতের পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়
অনলাইনে স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য বাধা হয়ে থাকা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একটি ধারা বাতিল করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আজ মঙ্গলবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দেন। আইনের বিতর্কিত এই ধারা ৬৬ (এ) নামে পরিচিত। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বিচারপতি জে চেলামেশ্বর ও আর এফ নারিমনের বেঞ্চ এই রায় দেন। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই অংশে কেউ অনলাইনে মন্তব্য করলে তাকে গ্রেপ্তার করার বিধান রাখা হয়েছিল।
রায়টি পাঠ করার সময় বিচারপতি আরএফ নারিমান বলেন, 'আইনের এই অংশ অসাংবিধানিক, এবং এটি বাতিল করে দিতে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই।' তিনি বলেন, 'জনগণের জানার অধিকার এই আইনের ধারা ৬৬ (এর) দ্বারা সরাসরি খর্ব হয়।'
এ ব্যাপারে দেশটির তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, 'যারা ক্ষমতায় আছে তাদের নিশ্চয়ই উদারনৈতিক হতে হবে, ভারত একটি স্বাধীন দেশ। ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে।'
রায়ে আরো বলা হয়, ৬৬ (এ) ধারাটি সংবিধান পরিপন্থী, কারণ এটি বর্তমান সময়ের জন্য ক্ষতিকর বা জনগণকে বিশৃঙ্খল করতে পারে বলে প্রমাণিত নয়। একই সঙ্গে এই আইনে ‘আপত্তিকর’ বিষয়টির যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মত প্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতাবিষয়ক আলোচিত বিষয়টি রায়ের জন্য মুলতবি রাখা হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, অপব্যবহারের শঙ্কায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ (এ) ধারাটিকে অসাংবিধানিক বলা যাবে না। শুনানিতে বলা হয়, মত প্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই, তবে অনলাইনকে অনিয়ন্ত্রিত রাখা যাবে না। শুনানি চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনের কিছু শব্দের ব্যাপারে আপত্তি জানান। এসব শব্দের মাধ্যমে আইনের অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকে বলে জানান আদালত।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ (এ) ধারায় ২০১২ সালে মুম্বাইয়ের পালঘর এলাকার দুই শিক্ষার্থী শাহিন ধাদা ও রিনু শ্রীনিবাস নামের দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের একজন শিব সেনা নেতা বাল থ্যাকারের মৃত্যুতে মুম্বাই শহরে কর্মবিরতি নিয়ে মন্তব্য করেন, অপরজন ওই মন্তব্যে সমর্থন (লাইক) দেন। একই বছর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই ধারার বিরুদ্ধে আদালতে অবস্থান নেন সিংহাল নামের এক শিক্ষার্থী। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন ভারতের বেসরকারি সংস্থা কমন কজ কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন।