২০০০ টাকার জন্য বন্ধুদের নিয়ে প্রেমিকাকে গণধর্ষণ, পরে হত্যা!
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় দুই হাজার টাকা পাওয়ার লোভে প্রেমিকাকে চার বন্ধুর হাতে তুলে দেয় এক ভণ্ড প্রেমিক। এরপর পাঁচজন মিলে ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। পরিচয় প্রকাশের ভয়ে গলা কেটে হত্যা করে তাকে।
সেই পাঁচ বন্ধুর চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সুলতান মাহমুদ প্রধান ও তৌহিদুল ইসলামের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামিরা হলো বাহুবল উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মেয়েটির প্রেমিক জুবায়ের আহমেদ (২৪), জুবায়েরের বন্ধু সাইফুর রহমান (২৪) ও আবু সাঈদ (২০) এবং উপজেলার মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মেয়েটির দুঃসম্পর্কের চাচা মামুনুর রশিদ (২৩)। অপর এক আসামি পলাতক রয়েছে।
আজ জেলা পিবিআইয়ের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান হবিগঞ্জ পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমান চৌধুরী।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘাতকদের বরাত দিয়ে জানান, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রুমানা বেগমের (২২) সঙ্গে একই গ্রামের জুবায়ের আহমেদের (২৪) প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে তারা প্রায়ই অনৈতিক সম্পর্কে মিলিত হতো। গত বছরের ৪ আগস্ট জুবায়ের তার চার বন্ধুকে বলে তিনি বাইরের জেলা থেকে একজন সুন্দরী মেয়ে এনে তার সঙ্গে আমোদফূর্তি করবে। বন্ধুরা যদি ওই মেয়ের সঙ্গে আনন্দ করতে চায় তাহলে প্রত্যেককে ৫০০ টাকা দিতে হবে। চার বন্ধু জুবায়েরকে ৫০০ টাকা করে দেয়। টাকা পাওয়ার পর জুবায়ের সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রেমিকাকে দিয়ে দেবে বন্ধুদের মনোরঞ্জনের জন্য। তিনি বন্ধুদেরকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজাপুর গ্রামের ঈদগাহের পাশে থাকতে বলে।
এদিকে জুবায়ের ওই সময় প্রেমিকা রুমানাকে তার ঘর থেকে ডেকে নিয়ে ঈদগাহের কাছে যায়। সেখানে তিনি তাঁর বন্ধুদের দেখিয়ে তাদের সঙ্গে ফূর্তি করতে বলে। রুমানা রাজি না হওয়ায় জুবায়ের ও তার বন্ধুরা তাকে ধর্ষণ করে।
রুমানা দুঃসম্পর্কের ভাতিজি হওয়ায় আরেক বন্ধু মামুনুর রশিদ ধর্ষণ করতে রাজি হয়নি। তখন জুবায়ের রুমানার চোখে হালকাভাবে উড়না দিয়ে বেঁধে দিলে মামুনুর রশিদ তাকে ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের শিকার রুমানা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেমিক জুবায়েরকে বলেন, ‘তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ। আমি এ ঘ্টনা সবাইকে বলে দেব।’ এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সবাই মিলে রুমানার গলা কেটে হত্যা করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমান চৌধুরী জানান, ওই রাতেই ঘরের মধ্যে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে মা বানেছা বেগম মেয়ের খোঁজে ঘর থেকে বের হন এবং আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করে মেয়ের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও তাঁকে পাননি। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বাড়ি থেকে প্রায় ৭০০ গজ দূরে ঈদগাহের কাছে ধানের জমিতে রুমানার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। এ ঘটনায় রুমানার মা অজ্ঞাত লোকদের বিরুদ্ধে বাহুবল থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ এই হত্যার কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি। এ অবস্থায় গত বছরের ৫ ডিসেম্বর পিবিআই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
পিবিআইর পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম মামলার তদন্ত করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহভাজন আসামি সাইফুর রহমানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক আসামি মামুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা উভয়েই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক আসামি আবু সাইদকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। সাইদও আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করে। সর্বশেষ গতকাল ৮ মার্চ প্রেমিক জুবায়ের আহমেদকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। আজ শনিবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় প্রেমিকা রুমানাকে গণধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পিবিআই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে।