যে কারণে প্যারিসের নটর ডেম ক্যাথেড্রাল গুরুত্বপূর্ণ
১১৬৩ সালে তৃতীয় পোপ আলেকজান্ডার প্যারিসে নটর ডেম ক্যাথেড্রালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে দুই শতক এর নির্মাণকাজ চলে।
৮৫০ বছরের পুরোনো গির্জাটি নানা কারণে গুরুত্ববাহী। গির্জাটিকে বলা হয় ফ্রান্স ও ইউরোপের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রতীক। এটির মূল গুরুত্ব গথিক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে।
গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঐতিহ্যবাহী ওই গির্জায় আগুন লাগে। বিবিসিসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম জানায়, এরপরই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
প্যারিস শহরের মাঝামাঝি ইল দে লা সিটি নামক এলাকায় মনোরম ওই গির্জার অবস্থান।
গির্জার ভেতরে শত শত বছরের পুরোনো পাথর, কাঠ, কাচ, সিরামিকসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম রয়েছে। আছে গোলাপের জানালাখ্যাত ফুলের নকশা আঁকা বিখ্যাত কাচের কাঠামো, আট শতাব্দীর পুরোনো কাঠে নির্মিত বিভিন্ন কাঠামো, ২৩ টনেরও বেশি ওজনের জোড়া ঘণ্টা, জোড়া টাওয়ার, ত্রিকোণ গম্বুজ, বানর আকৃতির গার্গলের মূর্তি। এ ছাড়া সংরক্ষিত আছে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সময়কালের বিভিন্ন নিদর্শন।
গির্জার টাওয়ার, বেল, ত্রিকোণ গম্বুজ, ভেতরের নকশা সব মিলিয়ে এর স্থাপত্যমূল্য অপরিসীম। ইউনেস্কো এটিকে বহু আগেই বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
৮৫০ বছর ধরে প্যারিসের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা নটর ডেম গির্জা এ জনপদের অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী। সুসংবাদে আর দুঃসংবাদে এটি ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে তা শহরবাসীকে পৌঁছে দেয়।
শেষবার ফরাসি বিপ্লবের সময় গির্জাটি বড়সড় ক্ষতির মুখোমুখি হয়। এ ছাড়া গত শতাব্দীর দুই বিশ্বযুদ্ধে এটিকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, ফ্রান্স নিজের স্থাপত্য আর শিল্পকর্ম বাঁচাতে প্রয়োজনে যুদ্ধেও হেরে যেতে পারে।
তবে যুদ্ধে বাঁচানো গেলেও এবারের অগ্নিকাণ্ডে এটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে গেছে ত্রিকোণ গম্বুজ, পুরোনো সেসব কাঠের কাঠামো আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গির্জার ছাদ ও ত্রিকোণ গম্বুজ ধসে গেছে। বেল বাজানোর দুই টাওয়ার ও মূল কাঠামোটি রক্ষা করা গেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ বিয়োগান্তক’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সব চেয়ে খারাপ দশা’ থেকে বাঁচানো গেছে। এর চেয়েও খারাপ হতে পারত। আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের মাধ্যমে নটর ডেম গির্জার পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি ছিল ফ্রান্সের সব মানুষের। যাঁরা কখনই সেখানে যাননি, তাঁদের জন্যও।
প্রতিবছর এক কোটি ৩০ লাখ দর্শনার্থী এটি দেখতে যান, যা ফ্রান্সের আরেক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থাপত্য আইফেল টাওয়ার দর্শনার্থীর চেয়ে বেশি।