শ্রীলঙ্কায় থামছে না লাশের মিছিল, নিহত দুই শতাধিক
সকাল পৌনে ৯টার দিকে বোমা বিস্ফোরণ শুরু হয়। একে একে একাধিক গির্জা ও হোটেলে আটটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়তে থাকে নিহত মানুষের সংখ্যা।
এসেছিলেন ইস্টার সানডের প্রার্থনায় অংশ নিতে। মুহূর্তে এসব মানুষ হয়ে যায় লাশ। সন্ধ্যা নাগাদ নিহতের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
আহত অনেকের অবস্থা গুরুতর বলে জানা যায়। আজ রোববার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ইস্টার সানডের দিন শ্রীলঙ্কায় এসব ঘটনা ঘটলো। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
৪৫০ জন আহত হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার পশ্চিম প্রদেশের নেগম্বো, পূর্ব প্রদেশের বাট্টিকালো এবং রাজধানী কলম্বোর গির্জাগুলোতে বোমা হামলা চালানো হয়। এছাড়াও কলম্বোর তিনটি পাঁচ তারকা হোটেল সাংরি-লা, কিংসবুরি ও সিনামন গ্র্যান্ডসহ আরেকটি আবাসিক হোটেলে হামলা হয়।
হামলার পর সারাদেশে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।
ভয়াবহ এই হামলায় কে বা কারা জড়িত এ নিয়ে এখনও কিছু বলেনি দেশটির সরকার। এমনকি দায় স্বীকারও করেনি কোনো পক্ষ। তবে আজ থেকে ১০ দিন আগে শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান পুজুথ জয়াসুন্দরা গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ ১০ কর্মকর্তাকে হামলার আশঙ্কার কথা জানান। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘বিখ্যাত গির্জাগুলোতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা হামলার পরিকল্পনা করছে।’
ওই সতর্কবার্তায় পুলিশ প্রধান বলেন, ‘একটি বিদেশি গোয়েন্দাসংস্থা জানিয়েছে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত (এনটিজে) বিখ্যাত গির্জা এবং কলম্বোতে ভারতীয় হাইকমিশনে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে।’
এদিকে মালয়েশিয়া ভিত্তিক লিডারস অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্রীলঙ্কার পুনর্বাসনমন্ত্রী এ হামলায় এনটিজের জড়িত থাকার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন।
পুনর্বাসনমন্ত্রী মাহামুদ লিব্বি আলিম মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ বলেন, ‘কেউ কেউ তাওহীদ জামাতের কথা বলছেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তবে আমাদের হাতে কোন দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মতো প্রমাণ নেই।’
তাওহীদ জামাতকে নির্দোষ দাবি করে এই মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হব।’
বিশ্বনেতাদের শোক ও নিন্দা
অন্যদিকে এই বর্বর হামলার নিন্দা জানিয়ে এবং শোক প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। পোপ ফ্রান্সিস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখাও, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নসহ আরো অনেকেই শোক প্রকাশ করে শ্রীলঙ্কার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক নির্বাচনী সভায় শ্রীলঙ্কায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের শক্ত অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের শ্রীলঙ্কার ভাইদের প্রতি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি। শ্রীলঙ্কানদের দুঃখের দিনে তাদের পাশে থেকে সংহতি জানাতে চাই।’
তবে এশিয়ায় শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ দেশ চীন এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি আছেন।
দুই বাংলাদেশি নিখোঁজ
ঘটনার পর থেকে এক শিশুসহ দুই বাংলাদেশির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, চারজন বাংলাদেশির একটি দল কলম্বো যায় পর্যটক হিসেবে। তাদের মধ্যে দুজন ঠিকঠাক থাকলেও একটি শিশুসহ দুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ দুজনের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তাঁরা ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আটক ৭
কলম্বোর উপশহর দেমাতাগোদা থেকে দুইজনসহ এ রোববার বিকেল নাগাদ হামলায় জড়িত সন্দেহে ৭জনকে আটক করার কথা জানান বিবিসি সিংহলা ভাষা সার্ভিসের প্রতিবেদক আজ্জাম আমিন। তবে এখনো কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশটির মাত্র ছয় শতাংশ ক্যাথলিক খ্রিস্টান। ইস্টার সানডের প্রার্থনার জন্য অনেক খ্রিস্টান গির্জাগুলোতে জড়ো হয়েছিলেন।