রাজনীতিতে আসছেন বেনজিরকন্যা
রাজনীতিতে আসছেন পাকিস্তানের দুবারের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর মেয়ে বখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। বখতাওয়ারের বাবা দলটির সহসভাপতি আসিফ আলী জারদারি ও ভাই বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি সভাপতি।
পত্রিকাটি জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বিলাওয়ালের বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলছে। এর জেরেই মেয়েকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জারদারি।
দলীয় সূত্র জানায়, রাজনীতি থেকে দুই বছরের বিরতি নিয়ে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা করেছেন অক্সফোর্ড থেকে স্নাতক পাস করা বিলওয়াল। লন্ডনে থেকে অক্সফোর্ডেই স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করবেন তিনি।
পিপিপির এক নেতা বলেন, বিলওয়ালের অনুপস্থিতিতে দলে একজন ভুট্টো দরকার। সে কারণেই বখতাওয়ার রাজনীতিতে আসছেন। দল ও জাতির প্রয়োজনেই তাঁকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জারদারি।
অচিরেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে বখতাওয়ারের অভিষেক হবে বলেও জানিয়েছেন ওই নেতা। তিনি দাবি করেন, নানা জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ এপ্রিল করাচিতে প্রথম রাজনৈতিক ভাষণ দিতে পারেন তিনি।
এর জন্য দলটির বর্ষীয়ান নারীনেত্রীদের কাছ থেকে এরই মধ্যে রাজনীতির তালিম নিয়েছেন তিনি।
২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে পিপিপির নির্বাচিত সভাপতি বিলওয়াল। মাতৃভাষায় কথা বলতে অনভ্যস্ত হওয়ার পরও রাওয়ালপিন্ডির এক নির্বাচনী সমাবেশ তাঁর মা বেনজির ভুট্টো মর্মান্তিকভাবে খুন হওয়ার পর তাঁকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির সভাপতি মনোনীত করা হয়। সিন্ধু প্রদেশে বেনজির ভুট্টোর পারিবারিক বাসভবনে বিলাওয়াল জারদারি পাকিস্তান পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের বৈঠকে বেনজিরের রেখে যাওয়া উইল পড়ে শুনিয়েছিলেন। বেনজির ভুট্টো তাঁর উইলে দলের সভাপতি পদের জন্য তাঁর স্বামী আসিফ আলী জারদারিকে মনোনীত করেছিলেন কিন্তু জারদারি নিজেই তাঁর ছেলের নাম প্রস্তাব করেন এবং কমিটি তা গ্রহণ করে।
কিন্তু গত বছর পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে বিলওয়ালের আত্মপ্রকাশের পরপরই দল পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে বাবার সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং তা একপর্যায়ে ঝগড়ায় রূপ নিয়েছিল। এই ঘটনার পরই পড়াশোনার জন্য লন্ডনে চলে যান বিলওয়াল।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৬৭ সালে পিপিপি গড়েন। ১৯৭৯ সালে হত্যার অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝোলান তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউল হক। তার আগে পর্যন্ত ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো ১৯৮৬ এবং ১৯৯৩ সালে দুবার দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির এক নির্বাচনী সমাবেশ শেষে সভাস্থল ত্যাগ করার পর গাড়িতে আরোহণের পর মুহূর্তে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন বেনজির ভুট্টো। আত্মঘাতী হামলাকারী প্রথমে তাঁর ঘাড়ে গুলি করে এবং পরে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
বেনজিরের মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী আসিফ আলী জারদারি ঘোষণা করেন, তাঁর ছেলেমেয়েদের সবাই নামের সঙ্গে ভুট্টো পদবি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।