যে কারণে শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন শ্রীলঙ্কা
আকালানকার বয়স মাত্র সাত। শ্রীলঙ্কার নেগম্বো শহরের সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে বোমা হামলায় পায়ে গুরুতর আঘাত পায় সে। এখন রয়েছে হাসপাতালে। সেখানে আশপাশের মানুষের কাছে ‘বোমা’ নামের একটি শব্দ শুনেছে সে। এরপর থেকেই তাঁর কৌতূহল এই ‘বোমা’ আসলে কী?
আকালানকার বাবা বাসন্তা ফার্নান্দো তাকে বলেছেন, ‘এটির কারণে অনেক জোরে শব্দ হয়।’ কিন্তু শিশুটিকে বলা হয়নি, মানুষের প্রাণহানির কারণ এই ‘বোমা’।
শুধু আকালানকার বাবাই নন, শিশুদের এমন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন অনেক অভিভাবক ও অনেক চিকিৎসক। অনেকে বুঝতে পারছেন না, এ বিষয়টিকে কীভাবে সামাল দেবেন তাঁরা।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির করা এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়।
শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে ১০ বছর আগেই। শ্রীলঙ্কার সরকার ও তামিল উগ্রপন্থীদের মধ্যে ৩০ বছর ধরে চলা ওই গৃহযুদ্ধে শ্রীলঙ্কার মানুষ দেখেছে অনেক ভয়াবহতা। ২০০৯ সালের দিকে থামে গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা।
ওই সব ভয়াবহতা অতিক্রম করে শান্তিতেই বসবাস করছিল দেশটির জনগণ। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার এই প্রজন্মের শিশুরা জানত না যুদ্ধের ভয়াবহতা কাকে বলে।
কিন্তু গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলা পাল্টে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার চেহারা। নতুন এই ভয়াবহতায় শিশুদের নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তাঁদের।
গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে একটি বড় অংশই শিশুরা। অথচ এর আগে এ রকম সহিংসতার কিছুই দেখেনি তারা।
এদিকে যেহেতু ইসলামী উগ্রপন্থীরাই এই হামলা চালিয়েছে, সেজন্য দেশটির মুসলিম সম্প্রদায় অনেক আতঙ্কে বাস করছে। আর এর ফলে নতুন ধরনের আতঙ্ক পেয়ে বসেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যেও।
কলম্বোর লেডি রিজওয়ে শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. অজিত দন্তনারায়ণ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘তারা সবাই শিশু। তাদের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা নেই, কোনো ধর্ম নেই। আমরা ৩০ বছরের একটি যুদ্ধ দেখেছি এবং সুনামির মুখোমুখি হয়েছি। সেগুলো সহ্য করার ক্ষমতাও অর্জন করেছি।’
অজিত আরো বলেন, “হাসপাতালে ছেলের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বাসন্তা ফার্নান্দো আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা না হয় এসব ব্যাপারে অভ্যস্ত। আমরা সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের কথা শুনেছি এবং টিভি ও সংবাদপত্রগুলোতে ক্রমাগত ছবি দেখেছি। কিন্তু কীভাবে আমি আমার সন্তানকে এ ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করব? তারাই বা এই এগুলোকে কীভাবে দেখবে?”
বাত্তিকালোয়া হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গাদাম্বানাথান হামলার পরেই আহত শিশুদের দেখতে যান। তাঁর কর্মীরা বলছেন, ‘আহত শিশুরা না না রকম মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তারা অনেক আতঙ্কিত, বিভ্রান্ত, এ ছাড়া তারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছে ও দুঃস্বপ্নও দেখছে।’
এদিকে এই হামলার ব্যাপারে শিশুদের বয়স অনুযায়ী কীভাবে কথা বলতে হবে, তার একটি নির্দেশনা দিয়েছে ইউনিসেফ। মূলত অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্যই ওই নির্দেশনা।
কলম্বোর একটি স্কুলে সাত থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের পড়ান দয়ানি সামারাকুন। তিনি বলেন, ‘অনেক শিশু হয়তো হামলার ব্যাপারে জানে না। আর যারা জানে, তাদের কথা আমাদের শুনতে হবে এবং তাদের ভয়ের কারণটা জানতে হবে।’