ফ্রান্সে ইসলামী বইয়ের বিক্রি তুঙ্গে
ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক বিদ্রুপ সাময়িকী শার্লি এবদোতে হামলার পর দেশটিতে ইসলামী বইয়ের বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছে। ইসলাম নিয়ে প্রচলিত চিন্তাগুলোকে যাচাই করতেই বইগুলো কিনছেন ফরাসিরা।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, ইসলাম নিয়ে ফ্রান্সের সাময়িকী ‘ফিলোসফি’র সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংখ্যা দেদার বিক্রি হয়েছে। সাময়িকীর পরিচালক ফ্যাব্রিস গারশেল বলেন, ‘ফরাসিরা নতুন নতুন প্রশ্ন করছেন, বিভিন্ন প্রশ্নের (ইসলামসংক্রান্ত) গণমাধ্যম থেকে পাওয়া উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।’
ফ্রান্সের জাতীয় বইবিপণি ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে ইসলামী বইয়ের বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
ধর্মভিত্তিক বইয়ের অন্যতম প্রকাশক প্রতিষ্ঠান লা প্রকিউর এর কর্তাব্যক্তি মাতিলদে মাহিউক্স বলেন, ইসলামপন্থী বর্বর গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) যেভাবে ধর্মকে উপস্থাপন করতে চাইছে, তার চেয়ে ভালোভাবে ধর্মকে বুঝতে চায় লোকজন, যাতে করে তারা বিষয়টি আত্মস্থ করতে পারে।
শার্লি এবদো সাময়িকী ও ইহুদিদের সুপার মার্কেটে জিহাদিদের হামলার পর অনেক অমুসলিমই ইসলাম সম্বন্ধে বহু জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে থাকেন। এ বিষয়ে পশ্চিম ফ্রান্সের নন্তে এলাকার একটি বইয়ের দোকানের কর্তা ইয়োভন জিলাবার্ত বলেন, ‘একজন অতি ক্যাথলিক ভদ্রমহিলা কোরআনের একটি কপি কিনতে এসেছেন। কারণ তিনি বুঝতে চান ইসলাম সংঘাতপ্রবণ ধর্ম কি না।’
ওই নারীর মতো অন্য অনেকে ইসলামের চরমপন্থী ব্যাখ্যাগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে চান। এ নিয়ে প্যারিসের একটি ধর্মবিষয়ক বইবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্রেতা প্যাট্রিস বাসনার্ড বলেন, ‘আমি মনে করি ধর্ম কী দিচ্ছে এটা দেখার আগে আমাদের দেখতে হবে মৌলবাদ কী।’
ফ্রান্সের শিক্ষকদের মধ্যেও ইসলাম সম্বন্ধে জানার আগ্রহ বেড়েছে। প্যারিসের নামী প্রতিষ্ঠান কলেজ দে ফ্রান্সের একটি চেয়ারে গত বৃহস্পতিবার স্টাডি অব দ্য কোরআন (কোরআন শিক্ষা) নামে একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে।
ফ্রান্সের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষকের শিক্ষক জ্যঁ রনি এ বছর মুসলামনদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পড়তে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সাধারণ সংস্কৃতি ক্লাসে ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর পাঠ যোগ করেছি।’
ইসলাম ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বইয়ের দোকান আল বোরাকের পরিচালক মনসুর মনসুর বলেন, তাঁর বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলার সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল।’
মনসুর বলেন, এ প্রবণতা চলতে থাকবে। কারণ ইসলাম প্রতিনিয়তই একটি ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকবে।