বাঁধে মরছে মংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ-চ্যানেল
খননকাজ চললেও মংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ-চ্যানেল ও চ্যানেলসংলগ্ন সংযোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন এলাকায় ২৩৩টি খালের ওপর এক হাজার ৯৩টি বাঁধ এখনো অপসারণ করা হয়নি। এসব বাঁধ অপসারণ করা না হলে নৌ-চ্যানেল আবারও হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
সূত্র জানায়, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নে ৩৪টি সরকারি খালে ১৪৪টি বাঁধ, বাঁশতলী ইউনিয়নে ২৬টি খালে ১৫৫টি বাঁধ, পেড়িখালী ইউনিয়নে ৩১টি খালে ১০৭টি বাঁধ, রামপাল সদর ইউনিয়নের ৩১টি খালে ২১৩টি বাঁধ, হুড়কা ইউনিয়নের ১২টি খালে ৬১টি বাঁধ, রাজনগর ইউনিয়নে ১৬টি খালে ৯৯টি বাঁধ, গৌরম্ভা ইউনিয়নের ৪১টি খালে ১৩৭টি বাঁধ, উজলকুড় ইউনিয়নে ২০টি খালে ২৩টি বাঁধ, ভোজপাতিয়া ইউনিয়নে নয়টি খালে ৯৬টি বাঁধ, মল্লিকের বেড় ইউনিয়নে ১৩টি খালে ৪৮টি বাঁধ রয়েছে।
এসব খাল চিহ্নিত করে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধ বাঁধ ও পলি অপসারণের কাজ শেষ করা হয়েছে বলে খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার মো. ফারুক হোসেন গত ৯ এপ্রিল রামপালে মতবিনিময় সভায় দাবি করেন।
তবে মংলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রাফা মো. আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৩৩টি খালে এক হাজার ৯৩টি বাঁধের তালিকা ও দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারিভাবে এসব খালের অবৈধ বাঁধ ও পলি অপসারণের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করেছিল, তা দিয়ে সম্পূর্ণ কাজ করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় এসব খালের অবৈধ বাঁধ ও পলি অপসারণের কাজ অনেকটা অসমাপ্ত রয়েছে।’
বিভিন্ন ইউনিয়নে অসংখ্য সরকারি নিবন্ধিত খালে বাঁধ থাকলেও কাটা হচ্ছে না বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব খালে বাঁধ রয়েছে।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাউদখালী নদী খননের পাশাপাশি ১৬টি খাল খননের কাজ অনেকটা এগিয়ে এনেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নদী ও খাল খননের কাজ শেষ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে মংলা-ঘাষিয়াখালীর ২২ কিলোমিটার নৌপথ নির্দিষ্ট সময়ে খননকাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।
সংগঠনের নেতারা জানান, এই নৌপথটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ পথে মংলা বন্দর, খুলনা নদীবন্দর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ। এ চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় বিকল্প নৌরুট হিসেবে সুন্দরবনের শ্যালা দিয়ে পণ্য পরিবহনে এর মারাত্মক প্রভাব সুন্দরবনের ওপর পড়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পরিবেশবিদ ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত বছরের ২২ মে থেকে এই চ্যানেলের খননকাজ শুরু হয়। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর বিকল্প নৌপথ সুন্দরবনের শ্যালায় অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর গত ৪ জানুয়ারি ঘটা করে চ্যানেল খনন জোরদার করা হয়। আমরা তখন থেকেই বারবার বলে আসছি, এ চ্যানেল সচল রাখতে হলে রামপালের ২৩৩ খালের শত শত বাঁধ দ্রুত উন্মুক্ত করে জোয়ার অববাহিকা সৃষ্টি করতে হবে; যা এখনো পর্যন্ত চোখে পড়েনি। বরং আমরা দেখলাম, ২৩৩ খালের বিপরীতে প্রায় এক হাজার ১০০টি অবৈধ বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীরা এখনো দখলে রেখেছে। ওই বাঁধ উন্মুক্ত করে এবং তার পলি অপসারণ করে জোয়ার অববাহিকা সৃষ্টি করা না হলে এ খনন প্রক্রিয়া আবারও ব্যর্থ হবে।
মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন শেখ সাংবাদিকদের জানান, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ নৌপথের শাখা নদী ও শাখা খাল আজ পর্যন্ত দখলমুক্ত হয়নি। নদী দখল বৈধভাবে হোক বা অবৈধভাবে হোক, কোনো অবস্থাতেই দখল বা স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না এমন একটি নির্দেশনা বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের থাকলেও সেটা কেউ তোয়াক্কা করছে না।
মহিউদ্দিন শেখ আরো জানান, জোয়ার-ভাটাপ্রবণ এ চ্যানেলে প্রতিদিন হাজার হাজার কিউবিক ঘনমিটার পলি এখনো আসছে। এটা যদি প্রাকৃতিকভাবে শাখা নদী ও শাখা খালে ছড়িয়ে দেওয়া না যায়, তাহলে মূল চ্যানেলে আবারও পলি জমে ভরাট হয়ে যাবে। এ জন্য পানির প্রবাহ বাড়াতে খাল ও নদী উন্মুক্ত করা খুবই জরুরি।’