বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব শুরু
উৎসবের রং লেগেছে পাহাড়ে। পাহাড়ি জনপদ যেন সেজেছে নতুন সাজে। ‘অতীতের ব্যর্থতা আজ মুছে দিয়ে যায়, নতুনের অঙ্গীকার আর উদ্দীপনায়, ছুটেছি ছুটেছি সম্মুখে ছুটেছি সত্য সুন্দরের সম্ভাবনায়’- প্রতিপাদ্য নিয়ে বান্দরবানে চারদিনব্যাপী মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ৮টায় জেলার পুরাতন রাজবাড়ী মাঠ থেকে ‘আপন ঐতিহ্যে সাজো’ স্লোগানে বর্ণাঢ্য সাংগ্রাই র্যালির মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। র্যালিতে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, চাক, খেয়াং, খুমী, বম, লুসাই, পাঙ্খোয়া সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী এবং শিশু-কিশোরসহ নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
বাংলা নববর্ষ বরণ এবং বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সব পাপাচার ও গ্লানি ধুয়ে মুছে নিতে পাহাড়ে বর্ষবরণ এবং বর্ষবিদায় উৎসবকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন করে।
বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উৎসবের নাম বৈসাবি। চৈত্র মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখ বছরের শেষ দুদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দুদিনের এ উৎসবকে ত্রিপুরাদের ভাষায় বৈসুক, মারমাদের ভাষায় সাংগ্রাই, চাকমাদের ভাষায় বিজু, অহমিয়াদের ভাষায় বিহু, তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষায় বিসু নামে ডাকা হয়। এর মধ্যে বৈসুকের ‘বৈ’, সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ এবং বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের সব জনগোষ্ঠীকে একসাথে উৎসবে সম্মিলিত করার জন্য এ নাম প্রচলন করা হয়।
মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে দুই দিনব্যাপী পানি খেলা, পিঠা তৈরি, বলিখেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উৎসব আয়োজক কমিটির সভাপতি মংচিনু মারমা।
সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ ‘মৈত্রী পানি বর্ষণ জলকেলি উৎসব’ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ ও ১৬ এপ্রিল। দিনব্যাপী এ উৎসবে জেলা শহরের পুরাতন রাজবাড়ী মাঠ, সদর উপজেলার রেইছা থলিপাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার হাইস্কুল মাঠে তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠবে পানিখেলায়। পানি খেলার অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, এ খেলায় বিবাহিত নারী-পুরুষরা অংশ নিতে পারে না।
১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মারমা শিল্পীগোষ্ঠীসহ স্থানীয় শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা নাচগান পরিবেশন করবেন। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় উজানীপাড়ার বিসিক গলি, মধ্যমপাড়ার ছয় নাম্বার গলি, জাদীপাড়া গলিসহ বিভিন্ন মহল্লায় তরুণ-তরুণীদের পিঠা তৈরির প্রতিযোগিতা চলবে।
রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারসহ (ক্যায়াং) বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারগুলোতে সন্ধ্যা ৭টায় মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন অনুষ্ঠান হবে। এ সময় মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ি নারী-পুরুষরা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন।
এ ছাড়া বান্দরবানের টংকাবতী ইউনিয়নের সাক্ষ্যয়পাড়ায় ম্রো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চাংক্রান উৎসব শুরু হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে ম্রোরা পানি খেলা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণ, লাঠি দিয়ে ভিন্ন কায়দায় শক্তি প্রদর্শন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।