ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ
নববর্ষের রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীর বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তপন কুমার সাহার কাছে এ অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীর নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁরা হলেন—আবদুর রহমান ইফতি (নৃবিজ্ঞান বিভাগ), রাকিব (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ), নুরুল কবির (নৃবিজ্ঞান বিভাগ), বিকাশ (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ), আশরাফ (ইতিহাস বিভাগ) ও অর্ণব দত্ত (রসায়ন বিভাগ)। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচ এবং শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য নিশাত ইমতিয়াজ বিজয় ও নাফিস ইমতিয়াজ নিজেদের বাঁচাতে ছাত্রলীগ কর্মী অর্ণব, বিকাশ ও আশরাফকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। তিনজন নিরপরাধ বলে দাবি করেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকেই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমার সহপাঠী নাহিদ আর আমি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চৌরঙ্গী হয়ে হলের দিকে হেঁটে আসছিলাম। তখন চৌরঙ্গী রাস্তায় আমাদের সঙ্গে পাঁচজন ছেলের দেখা হয়। ওরা আমাদের কথা বলার জন্য দাঁড় করায়।... শেষ পর্যায়ে তারা আমাদের গায়ে হাত তোলে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর পর আমার ব্যাগ থেকে মোবাইল ও ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে আমি চিৎকার করায় কয়েকজন লোক জড়ো হয় এবং ওরা পালিয়ে যায়।’
এদিকে, ঘটনার পর মারধরের শিকার নাহিদ মাওলানা ভাসানী হলে গিয়ে বড়দের বিষয়টি জানান। পয়লা বৈশাখ রাতেই শহীদ সালাম-বরকত হলের ৪২তম ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন মাওলানা ভাসানী হলের কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মী। এতে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান কয়েকজন।
গতকাল বুধবার বিকেলে ওই ছাত্রীকে মাওলানা ভাসানী হলে এসে মোবাইল ফোন ফেরত নেওয়ার কথা জানালে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পরে রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোন ফেরত দিতে ৪২তম ব্যাচের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই ছাত্রীর হলের সামনে যান লিখিত অভিযোগে নাম থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য নিশাত ইমতিয়াজ বিজয় (জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ), কার্যকরী সদস্য শান্ত হাসান (ইতিহাস বিভাগ) ও শহীদ সালাম-বরকত হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক নির্মল ত্রিপুরা (লোকপ্রশাসন বিভাগ)।
অভিযোগ ওঠা ছাত্রলীগের কর্মীরা দাবি করেছেন, ঘটনার সময় ওই ছাত্রী ও ছাত্রকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাঁদের পরিচয় জানতে চান তাঁরা। জবাবে তাঁরা দুজন দুর্ব্যবহার করায় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনার কিছু আগে বহিরাগতদের সৃষ্ট অন্য একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দুজনকেও বহিরাগত ভেবে এ ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে জেনেছি। তবে অপরাধী যে-ই হোক না কেন, দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি তন্ময় ধর বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার প্রমাণ। দোষীদের শাস্তির পাশাপাশি যারা এটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদেরও শাস্তির দাবি করছি।’
এ ব্যাপারে দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন তাদের প্রভাব খাটিয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে এবং আবার সে প্রভাব খাটিয়ে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত।’
এর আগে পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।