‘প্রতি মুহূর্তে যৌন হয়রানি’
‘শুধু ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, দেশের সবখানেই প্রতি মুহূর্তে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমাদের দেশে প্রত্যেকটা মেয়েই রাস্তায়, বাসে এমনকি বাড়িতেও কোনো না কোনোভাবে এর শিকার। যাঁরা বোরকা পরছেন, তাঁরাও রেহাই পাচ্ছেন না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি চত্বর, জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ঘটনায় দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে আজ রোববার সকাল ১০টায় ওই মানববন্ধন ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিভিন্ন একাডেমিক ভবন প্রদক্ষিণ করে র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলার মাঠে গিয়ে শেষ হয়। র্যালি শেষে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ‘সাবাস বাংলা ভাস্কর্যের’ চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে দেন।
মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত সুলতানা বৃষ্টির সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রেহনুমা শারমিন, তৃতীয় বর্ষের মোহনা ও সমাপ্তি, মৌমিতা, চতুর্থ বর্ষের সালিন এবং সিএসই বিভাগের মাস্টার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফিফা চেরি।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফিফা চেরি মানববন্ধনে বলেন, ‘আমাদের ভাবতে কষ্ট হচ্ছে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও নারীরা এভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। যদি দেশে কখনো কোনো পুরুষ প্রধানমন্ত্রী হয় তাহলে নারীদের কী অবস্থা হবে সেটা কল্পনাও করা যায় না। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচার চাইতে থাকব। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ততদিন পর্যন্ত খোলা চিঠি দেব যতদিন পর্যন্ত এ নরপশুদের বিচার না হয়।’
আফিফা চেরি আরো বলেন, ‘যৌন হয়রানি বন্ধে বোরকা কোনো সমাধান নয়। যাঁরা বোরকা পরেন, তাঁরাও নানাভাবে আরো বেশি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁরা কোনো যুক্তি দেখাতে আসবেন না। আপনাদের বিচার হবেই।’
মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাশা আল আইরিন খান নিজের অভিজ্ঞতার কথায় বলেন, ‘আমরা শুধু ঢাকার যৌন হয়রানির কথাই জানি। কিন্তু পহেলা বৈশাখে রাবিতেও আমার চোখের সামনে এক দম্পতিকে যৌন হয়রানি করা হয়েছিল। গত শনিবার সন্ধ্যায় পথ চলার সময় আমার দিকে পাথর ছুড়ে গালি দিয়ে অশ্লীল ইঙ্গিত করে দুজন দ্রুতবেগে মটরসাইকেলে চলে যায়। এগুলো হয়তো এখানে কম ঘটছে, তাই আমরা জানি না। কিন্তু প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে।’
ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রত্যেকটা মেয়েই রাস্তায়, বাসে এমননি বাড়িতেও কোনো না কোনোভাবে প্রতি মুহূর্তে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যাঁরা বোরকা পরছেন তাঁরাও হচ্ছেন। আমরা আর পোশাকের দোহাই শুনতে চাই না। যাঁরা যৌন হয়রানি করছেন, তাঁরা সাবধান হন। আপনাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে।’