কারাগার থেকে মিন্নির মুক্তি
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান মিন্নি। এ সময় তাঁর বাবা, চাচা ও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
মিন্নি জামিনে মুক্তি পাওয়ায় হাইকোর্টের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁর বাবা। তবে মিন্নিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করায় তাঁরা সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে মিন্নির মুক্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ।
হাইকোর্টের জামিনের আদেশের কপি আজ জেলা কারাগারে পৌঁছানোর পর মিন্নি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুক্তি পান বলে জানান জেল সুপার আনোয়ার হোসেন। এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর তাঁকে গ্রহণ করেন।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট বাবার জিম্মায় থাকা এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ১৯ বছর বয়সী মিন্নি জামিনে থাকা অবস্থায় তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এ ব্যত্যয় ঘটলে তাঁর জামিন বাতিল হবে।
পরে গত রোববার হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুন। সোমবার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এদিকে রিফাত হত্যা মামলায় রোববার মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে বরগুনা পুলিশ। আদালত পরিদর্শক আবদুল কুদ্দুস জানান, সদর থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে ৬১৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরের দিন বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ১৯ জুলাই তাঁকে আদালতে হাজির করা হয় এবং তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়।
রিফাত হত্যা মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৪ জন কিশোর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আলাদা সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের দাবি, কারাগারে মিন্নি তাদের জানিয়েছেন যে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। ৩১ জুলাই মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়।