মিন্নিকে দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়
অবশেষে সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা কারাগারের সদর গেট থেকে বাবার হাত ধরে বের হতে দেখা যায় মিন্নিকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর, মিন্নির একমাত্র ভাই মুকিম হাসান, চাচা আবু সালেহ কাউন্সিলর, মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের, মামা সুজন মোল্লা প্রমুখ।
কারাগার থেকে জামিনে মিন্নির মুক্তি পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কারাগার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয় শতাধিক উৎসুক জনতা।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে মিন্নির জামিনের আদেশ বরগুনার আদালতে পৌঁছায়। সেখানে আইনি প্রক্রিয়া শেষে জামিনের আদেশের কপি কারাগারে পাঠানো হয়।
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মিন্নিকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিনের আদেশের স্বাক্ষরিত কপি দুপুর ১২টার দিকে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। পরে মিন্নির পক্ষে বেইলবন্ড দাখিলের অনুরোধ করা হয়। বিচারক বেইলবন্ড গ্রহণ করে কারা কর্তৃপক্ষকে রিলিজ অর্ডার পাঠান। সব দাপ্তরিক কাজ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারামুক্ত হন মিন্নি।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা ১৪ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার দিন ধার্য থাকায় মঙ্গলবার বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে তাদের হাজির করা হয়। আদালতে হাজিরের জন্য একটি প্রিজনভ্যানে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে প্রথমে ১৩ পুরুষ আসামিকে আনা হয়। এরপর একই ভ্যানে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এরই মধ্যে গত রোববার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এ অভিযোগপত্রে মিন্নিকে সাত নম্বর আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করার পেছনে একাধিক কারণ দেখানো হয়। একটি মোবাইলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাদের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এ মামলায় আসামি রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী রাব্বি আকন ও টিকটক হৃদয়ের দেওয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ হত্যার সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মিন্নি নিজেও এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে অবশ্য মিন্নি তাঁর জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
গত ২৬ জুন শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে বরগুনার কলেজ গেটের সামনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও চিত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তাঁর ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়।
গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরের দিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে ১৬৪ ধারায় মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ এবং রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন মিন্নি।’
এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেলল হোসেন কিশোর অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তিনি দাবি করেন। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা।